খেলাধুলা

রকিবুলের ১৯০ রানের পরও মোহামেডানের পরাজয়

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসা দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশারের চোখ ছানাবড়া! মুখে বিস্ময়-‘একি দেখছি! রকিবুল একি ব্যাটিং করছে! এতকাল জানতাম, ওর ধৈর্য্য ও সংযম বেশি। দেখে খেলতে পারে। নিজের দিনে উইকেটের সামনে ও দু’দিকে স্ট্রোক প্লে‘র পর্যাপ্ত সামর্থ্যও রাখে; কিন্তু আজ এ কোন রকিবুলকে দেখছি! ওর ব্যাটের এত ধার, এমন তেজ তো দেখিনি কোনদিন!’

Advertisement

শুধু মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর হাবিবুল বাশারই নন। অতিবড় মোহামেডান আর রকিবুল ভক্তও অবাক! সবার মুখে একটাই কথা, ‘সতিই রকিবুলের এমন মারমুখি আর তেজোদ্দীপ্ত উইলোবাজি তো দেখিনি কখনো!’

ভক্তদের সাথে সুর মিলালেন দেশের অন্যতম সিনিয়র ও দক্ষ স্কোরার হাবিবউল্লাহও। দুই যুগের বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্কোরিং করা হাবিবউল্লাহ চোখে দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। জাগো নিউজের সাথে আলাপে হাবিউল্লাহর বিস্ময়সূচক মন্তব্য, ‘ভাই আমি রকিবুলকে কোন পর্যায়ে কোনো দিন এমন হাত খুলে খেলতে দেখিনি।’

ওপরে যাদের কথা বলা হলো, শুধু তারাই নন। আসলেই আজ রকিবুল ব্যতিক্রমি ব্যাটিং করেছেন। যারা তাকে চেনেন, জানেন- সবাই বিস্মিত। সবার কথা, রকিবুল এত আক্রমনাত্মক ব্যাটিং কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন এতদিন। কোনোদিন তো এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং করেননি!

Advertisement

সাধারণতঃ ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করা রকিবুল সব সময় অপেক্ষায় থাকেন কখন আলগা ডেলিভারি আসবে আর চার হাঁকাবেন। সেই রকিবুল যখন ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি আর ৬২ বলে শতরান করেন তাও চার ও ছক্কার নহর বইয়ে দিয়ে তখন অবাক না হয়ে উপায় আছে?

সচরাচর মাটি কামড়ানো গাণিতিক শটস খেলা রকিবুল আজ বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে ছক্কা ও চারের ফুলঝুরি ছুটিয়ে দিয়েছেন। খেলার ফল ছাপিয়ে, আর বিজয়ী দলের সাফল্যের সাতকাহন পিছনে ফেলে ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত পারফরমার রকিবুল হাসান।

কিন্তু লঙ্কান আসালঙ্কা ছাড়া মোহামেডানের আর একজন ব্যাটসম্যানও ন্যুনতম সহযোগিতা করতে পারলে হয়ত ম্যাচের ফল ভিন্নও হতে পারতো; কিন্তু তা আর হলো কই?

শুরুতে তিন টপ অর্ডার অভিষেক মিত্র (৩), রনি তালুকদার (১৯) আর শামসুর রহমান শুভ (১৪) ব্যর্থতার মিছিলে। ৮.২ ওভারে ৩৮ রানে তিন উইকেটের পতন। সেই খাদের কিনারায় পড়েও কি অসীম সাহস আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ব্যাট করলেন মোহামেডানের বর্তমান অধিনায়ক।

Advertisement

সঙ্গে শ্রীলঙ্কার আসালঙ্কা। দু’জনে মিলে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েও প্রবল বিক্রমে আবাহনীর বোলিংকে লণ্ডভণ্ড করে তরতরিয়ে এগিয়ে গেলেন। আগের ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়া অফস্পিনার শুভাগত হোমকে মুড়ি মুড়কির মত উড়িয়ে মারলেন রকিবুল। পাঁচ পাঁচটি ছক্কা হাকালেন শুভাগত হোমের বলে।

তার মত তেড়েফুড়ে মারতে না পারলেও আসালঙ্কা খেলছিলেন দেখে-শুনে। বল পিছু রান তোলা এ লঙ্কানের ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটলো ইনিংসের ৩০ নম্বর ওভারে। ভারতীয় বাঁ-হাতি স্পিনার মনন শর্মার বলে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার ২গজ সামনে ক্যাচ দিলেন আসালঙ্কা।

৬০ বলে ৬৩ রানের ইনিংসটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গলো ১৭৫ রানের বিশাল জুটিও। ৩৮ রানে তিন টপ অর্ডার সাজঘরে ফেরত যাওয়ার পর এত দীর্ঘ জুটি, তাও মাত্র ২০.৫ ওভারে মাত্র ১২৫ বলে! ভাবা যায়!

আজ ঢাকার অদুরে সাভারের বিকেএসপি মাঠে শ’খানেক অতি উৎসাহি ক্রিকেট অনুরাগি সেই জুটি নিজ চোখে দেখেছেন। যেখানে প্রায় পৌনে চারশো রানের পিছু ধেয়ে ওভার পিছু আট রানের বেশি করে নিতে দেখেছেন রকিবুল ও আসালঙ্কাকে; কিন্তু ওই জুটি ভাঙ্গার আবার নুয়ে পড়া।

উইকেটরক্ষক জাবিদ হোসেন (৫) আর নাজমুল মিলনও (২২) ব্যর্থ। যাকে অনেকে ছক্কা মিলন বলেই ডাকেন, মাঝে মধ্যে বিশাল ছক্কায় মাঠ গরমের নজির আছে তার; কিন্তু আজ দলের প্রয়োজনে তারা বাড়তি কিছু করা বহুদুরে, অধিনায়ককে সাপোর্ট দেয়ার কাজটিও করতে পারেননি।

তারপরও শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন রকিবুল। আবাহনী পেসার কাজী অনিক ইসলামের করা শেষ ওভারে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার ৫গজ সামনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়লেন মোহামেডান অধিনায়ক।

প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত আর অবসন্ন রকিবুল যখন শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথে তখন আবাহনী সমর্থক এবং ড্রেসিংরুমও ডাগ আউট থেকে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন।

রকিবুল এমন প্রশংনার জোয়ারে ভাসতেই পারেন। যত রকম প্রশংসাই করা হোক না কেন, তাকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারবেন না অতিবড় সমালোচকও। ১৩৭ বলে ১৯০, যে কোন মানদন্ডে অবিস্মরনীয়। অনন্য ব্যাটিং শৈলীর অনন্য দৃষ্টান্ত। ১০ ছক্কা আর ১৭ বাউন্ডারি- মানে ১২৮ রান শুধু ছক্কা ও চার দিয়ে এসেছে, ভাবা যায়!

কিন্তু সহযোগিদের চরম ব্যর্থতায় রকিবুলের অমন অবিস্মরনীয় ইনিংসটি লেখা থাকবে পরাজয়ের খাতায়। তার এমন বীরোচিত ইনিংসের পরও মোহামেডান হারলো ২৭ রানের ব্যবধানে।

মোহামেডানকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে উঠে গেছে আবাহনী। ৮ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ১২। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মোহামেডান।এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি