জাতীয়

অপরাধী না হয়েও মুখ লুকাতে হচ্ছে ওদের

 

তারা কোনো অপরাধ করেননি। বরং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ক’দিন দেরিতে হলেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিকৃত মানসিকতার সেই তরুণদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অথচ সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।

Advertisement

আসামিপক্ষের হুমকির পাশাপাশি সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী দুই তরুণীকে। অপরাধী না হয়েও মুখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে ওদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইতোমধ্যে তাদের একজন ঢাকা ছেড়েছেন। অন্যজন নিজের বাসায় থাকার সাহস পাচ্ছেন না। আত্মীয়দের বাসায় গিয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে।

ভুক্তভোগী এক তরুণীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রধান ফটকে একজন নিরাপত্তাপ্রহরী বসে আছেন। তার কাছে বাসার ঠিকানা, পরিচয় এবং আসার উদ্দেশ্য বলার পরও ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।

Advertisement

তবে প্রায় আধা ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষার পর ইন্টারকমে কথা বলার সুযোগ হয়। অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি জানান, নিজেদের এ বিপদের সময় তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না।

দারোয়ানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, কেউ কোনো খোঁজ করলে কিছু না জানাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগী দুই তরুণীর স্বজন এবং তাদের বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে নানাভাবে ওই দুই তরুণীকে হুমকি দেয়া হয়। ভয় পেয়ে তারা সময়মতো মামলা করতে পারেননি। এছাড়া মামলার বিষয়ে দুজনের একই সিদ্ধান্তে আসা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এক ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে জানানো হয়, যারা অপরাধ করেছে তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। অথচ কোনো অপরাধ না করে দুই তরুণী ও তাদের পরিবারকে মুখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে।

Advertisement

তাদের অভিযোগ, দোষীদের শাস্তি দেয়ার চেয়ে উল্টো ভিকটিম ও তাদের পরিবারকে হেনস্তা করাই প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেয়ারও অভিযোগ করেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাদাত আহমেদ ও নাইম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে বনানীর কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর ‘দ্য রেইন ট্রি’ নামের একটি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াত দেন। সেখানে যাওয়ার পর জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে হত্যার পর মরদেহ গুম করার ভয় দেখিয়ে পরদিন সকালে দুই তরুণীকে তাদের বাসায় পাঠানো হয়। শুরুতে ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানালেও পরে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন দুই তরুণী। কিন্তু আসামিরা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় বনানী থানা পুলিশ প্রথমে তাদের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অনেক চেষ্টার পর ৬ মে মামলা নেয় সংশ্লিষ্ট থানা। তবে এখনও কোনো আসামিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

জেপি/জেডএ/এমএআর/পিআর