জাতীয়

রামপুরা ট্রাজেডির হোতা মনিরের ফাঁসি চান ঝিলপাড়বাসী

রাজধানীর রামপুরা ট্রাজেডির মূলহোতা মনিরুজ্জামান চৌধুরী র্যাবের হাতে আটকের পর ফুঁসে উঠেছে হাজীপাড়া ঝিলপাড় এলাকার বাসিন্দারা। বিক্ষুব্ধ ঝিলপাড়বাসী মনিরের ফাঁসির দাবিতে রামপুরা এলাকায় মিছিল ও বিক্ষোভ করেছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মনির জামিনে বের হতে পারেন বলেও আশঙ্কা তাদের।গত ১৫ এপ্রিল রামপুরার হাজীপাড়ায় ঝিলপাড়ে দো’তলা টিনশেড বাড়ি দেবে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৩০টির বেশি নিম্নবিত্ত পরিবার। টিনসেডের ওই বাসাটির মালিক মনিরুজ্জামান চৌধুরী স্থানীয় যুবলীগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি।সোমবার ভোরে কুমিল্লার নিশ্চিন্তপুর টিপরা বাজার থেকে রামপুরা ট্রাজেডির হোতা মনিরকে র্যাব-৩ এর একটি দল আটক করে বলে জানান র্যাব-৩ এর পরিচালক (সিও) লে কর্নেল সারওয়ার।সোমবার দুপুরে র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, রামপুরার ট্রাজেডির মূল হোতা মনিরুজ্জামান চৌধুরী একজন পেশাদার অপরাধী। তিনটি হত্যা ও দুটি অস্ত্র মামলাসহ চাদাবাজি ও মারামারির ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি তিনি। এসব মামলায় একাধিকবার জেলও খেটেছেন মনির।এর আগে ঘটনার পর দিন ১৬ এপ্রিল বিকেলে রামপুরা থানার এসআই আবুল রশিদ বাদি হয়ে মনিরের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড মামলা (মামলা নম্বর ১৯) দায়ের করেন।মামলার এজাহারে বলা হয়, রামপুরা ঝিলপাড়ে টিনের দোতলা ঘর বানিয়ে ভাড়া দেন মনির। প্রতিমাসে এখান থেকে মোটা অংকের টাকা ভাড়াও তুলতেন তিনি। ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে তৈরি করা ওই ঘর কাদায় ডুবে মারা যান অন্তত ১২ জন, আহত হন আরও ৩০ জন।ঘটনার পর স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি ঝিলের আড়াই কাঠা জায়গা দখল করে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ঘরগুলো তুলেছিলেন মনির চৌধুরী। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে ঝিলের ওপর এমন একটি টিনসেডের বাড়ি তুলে ব্যবসা শুরু করলেও নিষেধ করেনি স্থানীয় প্রশাসন।তাদের দাবি, সেখান থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা পেতেন স্থানীয় প্রশাসন। আর এ কারণেই তারা কখনো ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে বাধা দিতেন না।এ ব্যাপারে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল) মো. নুর বলেন, মামলার পর গ্রেফতারও হয়েছেন ডুবে যাওয়া ঘরের মালিক মনিরুজ্জামান চৌধুরীর। রামপুরার ঝিলপাড়ের দুর্ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে ছাড় পাবেন না মনির।ঝিলপাড়ে গড়ে তোলা মনিরুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িটির পাশের কয়েকটি বাড়ির ভাড়াটিয়া ও তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে রাজনীতি করেন। মনির মাদক ও ডিস ক্যাবলের ব্যবসা করতেন। রামপুরার হাজীপাড়াতে বসবাসকারী মনির দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন।নাম না প্রকাশ করার শর্তে মনির চৌধুরীর বাড়ির এক ভাড়াটিয়া বলেন, তিনি যেই দলই করুক না কেন, ওনার কারণে আমার স্বামী, ননদকে হারাইছি। আমি ওনার ফাঁসি চাই। মনিরের সেই টিনসেড বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে স্বামী খোকনের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন বরিশালের নাসরিন বেগম (৩৫)। কাজ করেন ওভারসিস নামে একটি স্থানীয় গার্মেন্টসে।মনিরকে আটক করা হয়েছে সংবাদ জানার পর তিনি ঝিলপাড়ে আসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, টাকা কম নিতেন মনির। বাসায় থাকতাম ১২ ঘণ্টা। এর বাইরে অফিসেই সময় কেটে যেতো। কখনো ভাবিনি এভাবে সব এলোমেলো হবে।তিনি বলেন, মনিরের ধোঁকার কারণে নিজের বোন ও ভাসুরকে (স্বামীর ভাই) হারিয়েছি। প্রতারক মনিরকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয় সেই দাবি জানান তিনি।ঝিলপাড়ের পাশেই বউবাজার। বাজারের সবজি আড়ত ব্যবসায়ী মনসুর জানান, মনিরের গ্রেফতারের খবরে ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।মনসুর জানান, দলীয় ক্ষমতা কিংবা টাকার প্রভাবে এমন ঘটনার পরও বেরিয়ে যান ঘাতক অপরাধীরা, কিন্তু যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, মারা যান তারা আর ক্ষতিপূরণের টাকাও পান না, বিচারও পান না। অন্য সবার মতো তিনিও মনিরের ফাঁসি দাবি জানান।এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৭) একেএম রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, রামপুরা ট্র্যাজেডির মূল হোতা মনিরুজ্জামান চৌধুরী মনিকে ছাড় দেয়া হবে না। মনিরুজ্জামান যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে পার পেতে পারবেন না। দোষী হলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে।ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ তফাজ্জল হোসেন মিয়া জাগো নিউজকে জানান, মনিরের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে টিনসেড বাড়ি বানানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা উদঘাটনে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল হককে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ করছে। রামপুরা থানর ওসি মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢাকা ও এর পাশে মনিরকে না পেয়ে র্যাবের সহায়তায় কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।মনিরের গ্রেফতারের পর ঝিলপাড় এলাকায় বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবসী। তবে কোনো ধরনের ঝামেলা যাতে না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।জেইউ/বিএ/আরআইপি

Advertisement