আগামী বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাতে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে পৃথক বরাদ্দ থাকছে। এ খাতে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত বেতন কাঠামো কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকেই।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পে কমিশনের পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেবে `সচিব কমিটি`। জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিভিন্ন ধাপে আগের চেয়ে গড়ে ১০ শতাংশ কম বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত পে কমিশনের মূল প্রতিবেদনে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য শতভাগ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করতে এ বছরের জানুয়ারিতে গঠন করা হয় সচিব কমিটি। এই কমিটি তাদের পর্যালোচনা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্ধিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য আগের চেয়ে `অতিরিক্ত` অর্থ লাগবে ১২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে সরকার। সে মোতাবেক, প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে উল্লিখিত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরীজীবীদের পেছনে এখন বছরে যে খরচ হয়, তা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আড়াই শতাংশ। নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলে এটি জিডিপির ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত চাকরিজীবীরা এ হিসাবের বাইরে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা সবাই সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সে হিসাবে বর্তমানে ২১ লাখ কর্মরত রয়েছেন, যারা সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত মাসিক বেতন পাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী তাদের জন্য কী সুখবর নিয়ে আসছেন তা জানা যাবে আগামী ৪ জুন বাজেট ঘোষণা হলে।সূত্র জানায়, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত পে কমিশনের গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে জমা দেওয়া মূল প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন ধাপের মূল বেতন ছিল ৮ হাজার ২০০ টাকা। কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত মূল বেতন আরও ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে `সচিব কমিটি`। তবে গ্রেড-১ পদমর্যাদার কর্মকর্তা তথা সচিব, সিনিয়র সচিবদের মূল বেতন কিছুটা কাটছাঁটের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মূল বেতনে সামান্য পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। যারা নতুন চাকরিতে প্রবেশ করবেন তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় ডিসেম্বরে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে। পক্ষান্তরে, এই গ্রেডে বেতন কিছুটা কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে সচিব কমিটি। ফরাসউদ্দিনের দেওয়া প্রতিবেদনে গ্রেড-১-এর মূল বেতন ৮০ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, এই গ্রেডের বেতন কমিয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারে সচিব কমিটি। সিনিয়র সচিব, মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করতে পারে সচিব কমিটি, পে কমিশনের সুপারিশ ছিল ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার গ্রেডে বেতন ২ হাজার টাকা কমানোর প্রস্তাব করতে পারে সচিব কমিটি।এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পে কমিশন বাস্তবায়নের পর বাজারে বাড়তি অর্থের প্রবাহ আসবে। তখন মূল্যস্ফীতির চাপ আসতে পারে। যদিও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং পে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এ আশঙ্কা নাকচ করে দেন।# চূড়ান্ত হলো অষ্টম বেতন কাঠামো# আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় যাচ্ছে অষ্টম বেতন কাঠামোএআরএস/আরআই
Advertisement