গণমাধ্যম

ইনকিলাব সাংবাদিকদের গণচাকরিচ্যুতিতে ডিআরইউর প্রতিবাদ

দৈনিক ইনকিলাবে সাংবাদিকদের গণচাকরিচ্যুতির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি শনিবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

Advertisement

ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠনটি।

ডিআরইউ’র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করে, বেতন-ভাতা বিষয়ে ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের দেয়া প্রস্তাব শুধু অনৈতিক ও বেআইনিই নয়; এ ধরনের নীতি-বিবর্জিত প্রস্তাবনা গণমাধ্যমের জন্য এক অশনিসংকেত।

ইনকিলাব সম্পাদক পত্রিকাটিতে কর্মরত সব সাংবাদিক-কর্মচারীর পাওনাদি তার মনগড়া পদ্ধতিতে হিসেব করে প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়- আপনাদের পাওনা থেকে ৩০ শতাংশ দিতে হবে। বাকি ৭০ শতাংশের দাবি ছেড়ে দিয়ে আপনাদেরকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে টিপ-সই দিয়ে অঙ্গীকার করতে হবে যে সমুদয় পাওনা বুঝে পেয়েছেন। যারা এই প্রস্তাবে রাজি হবেন না তাদেরকে চাকরিচ্যুতি করা হবে। এই কুপ্রস্তাবনায় রাজি না হওয়ায় পত্রিকাটি থেকে গত কয়েকদিনে ডিআরইউ’র ৭ জন সদস্যসহ প্রায় শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারীকে বিনা নোটিশে গণচাকরিচ্যুত করেছে ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ। যাদের মধ্যে রয়েছেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

Advertisement

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যারা ইনকিলাব পত্রিকাটিতে চাকরিতে বহাল রয়েছেন তাদের সঙ্গেও করা হয়েছে চরম প্রতারণা। ২৬ মাসের বকেয়া বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধ না করেই সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্ট্যাম্পে লেখা ঘৃন্য অঙ্গীকারনামায় টিপসই দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ‘সংবাদপত্র মালিক-সাংবাদিক, শ্রমিক-কর্মচারী সমঝোতা স্মারক’ নামক এই চুক্তিনামায় উল্লেখ রয়েছে, ‘এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পর দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠানের সহিত আমার কোনরূপ মালিক শ্রমিক সম্পর্ক থাকিবে না।’ এর মধ্যে দিয়ে ওয়েজবোর্ডের আওতায় চাকরি করা সব সাংবাদিক-কর্মচারীকে ওয়েজবোর্ডের পরিবর্তে নির্ধারিত (কনসুলেটেড) বেতনে ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এখানে ডিআরইউর বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, সংবাদপত্র পরিচালনের আইন কানুন রয়েছে। ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ ওয়েজ বোর্ডের আওতায় সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনসহ সুযোগ-সুবিধা নেবেন, আর সবাইকে কনসুলেটেড বেতন দেবেন, তা কখনই সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। এরকম অনৈতিক কাজ যাতে ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ না করতে পারে সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে ডিআরইউ।

ডিআরইউ মনে করে, ইনকিলাব কর্তৃপক্ষের এই হীন কর্মকাণ্ড এখনই রুখে না দিতে পারলে গোটা গণমাধ্যম জুড়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। দেশের প্রচলিত আইনে যে কোনো গণমাধ্যমের কর্মীকে ছাঁটাই করার সুযোগ রয়েছে। তবে পূর্বেনোটিশ দিয়ে এবং সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেটা করতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সঙ্গে ডিআরইউ লক্ষ্য করছে যে, দৈনিক ইনকিলাব প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-বিধান এমনকি ন্যূনতম মানবিক বিবেচনাবোধের তোয়াক্কা না করে গণছাঁটাই করে চলেছে। কোনো দায়িত্বশীল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি অনতিবিলম্বে দৈনিক ইনকিলাবে গণচাকরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহার, সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। একইসঙ্গে ইনকিলাবের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ ও অন্যায় কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত পত্রিকাটির সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি।

Advertisement

এছাড়াও সম্প্রতি দৈনিক মানবকণ্ঠ ও নিউ নেশন থেকে অনেক সাংবাদিক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে মানবকণ্ঠের ৪ জন ও নিউ নেশনের একজন ডিআরইউ’র সদস্য রয়েছে। ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করে অনতিবিলম্বে তাদের চাকরিতে পুনর্বাহাল কিংবা সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এইচএস/জেএইচ/আরআইপি