বিশেষ প্রতিবেদন

বায়রার ‘অবান্তর’ আবদার

জি টু জি (সরকারি পর্যায়ে) প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া যেতে সরকার নির্ধারিত খরচ আরও পাঁচ থেকে ছয় গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। তাদের এ আবদার নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার।

Advertisement

বিশ্লেষকদের মতে, বায়রার এ দাবি নিতান্তই অবান্তর।

প্রসঙ্গত, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা খরচ নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যেক কর্মীকে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যা নির্ধারিত খরচের প্রায় ১০ থেকে ১২ গুণ । এ অবস্থায় আবারও মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ বাড়ানো হলে কর্মীদের কাছ থেকে আরও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, বায়রার নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে এখনই কোনো মতামত না দিলেও শ্রমিক অভিবাসনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা বেঁধে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশভেদে অভিবাসনের এ ব্যয়সীমা একজন কর্মীর তিন-পাঁচ মাসের বেতনের সমপরিমাণের কথা ভাবছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

বায়রা মালয়েশিয়ার খরচ বাড়াতে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে। নির্মাণ ও কারখানা শ্রমিকদের জন্য এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং প্লান্টেশন খাতের কর্মীদের মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ দেড় লাখ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত খরচের প্রায় ৫-৬ গুণ বেশি।

নানা অভিযোগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর সরকারিভাবে কর্মী পাঠাতে জি টু জি চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। জি টু জি পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠাতে চরম ব্যর্থ হওয়ার পর গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যুক্ত করে জি টু জি প্লাস চালু করে দু’দেশের সরকার।

জি টু জি চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচ ৩৩ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। সহস্রাধিক জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

নতুন চুক্তিতে (জি টু জি প্লাস) দেশটিতে কর্মী যাওয়ার নির্ধারিত খরচ ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন দেখা যায়।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত যতজন জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছেন, তাদের প্রত্যেককেই অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হয়েছে। যা তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে সরকারেরও কোনো নজরদারি না থাকায় ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে বায়রার নতুন প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো বিপাকে সরকার। কারণ, এতে সম্মত হতে হলে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বায়রার প্রস্তাব পেয়েছি। তাদের কথা শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

দু’দেশের মধ্যকার চুক্তির পরিবর্তে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়া জরুরি। যে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) দু’দেশের মধ্যে রয়েছে, আলোচনা ছাড়া একটি অক্ষর বদলানোর সুযোগ কোনো পক্ষেরই নেই- বলেন তিনি।

সরকার নির্ধারিত বর্তমান খরচের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচে শ্রমিকরা মালয়েশিয়া যাচ্ছে বলেও স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।

এমন অবস্থায় আবারও খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব কতটুকু যৌক্তিক- জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বায়রা’র সভাপতি বেনজির আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, রিক্রুটিং এজেন্সির খরচ বেশি হওয়ায় এ দাবি জানিয়েছি আমরা।

বায়রার দাবিসম্বলিত চিঠি থেকে জানা যায়, কর্মীর চাহিদাপত্র সংগ্রহের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস চার্জ, লবি, কর্মীবিমা এবং প্রদেয় ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ হাজার টাকা, বিমানভাড়া, কর ও বহির্গমন ছাড়পত্র বাবদ তিন হাজার ২০০ টাকা, অগ্রীম আয়কর এক হাজার ২০০ টাকা, কল্যাণ তহবিল চার হাজার টাকা, ডাটাবেজ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ টাকা, মেডিকেল ফি ছয় হাজার টাকা, স্থানীয় ও রিক্রুটিং সার্ভিস চার্জ ৩০ হাজার টাকা, উভয় দেশে ভিসা, ইউটিলিটি, যাতায়াত, হোটেলভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা ধার্যের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কৃষি ভিসার জন্য এ খরচ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম ধরা হয়েছে।

এভাবে অভিবাসন মূল্য বাড়ানোর দাবি অন্যায় জানিয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার জাগো নিউজকে বলেন, সরকার কিসের ভিত্তিতে অভিবাসন খরচ নির্ধারণ করে সেটা আমরা জানি না। আবার যাওয়ার খরচ বাড়ানো হলে শ্রমিকদের সেই খরচের বেশি দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে হবে না- বায়রা কী নিশ্চয়তা দিতে পারবে?

‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় তারা দিতে পারবে না’ মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, ‘মালয়েশিয়ার বাজারটি গোলকধাঁধার মধ্যে থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেশন, প্রতিযোগিতা না থাকা ও সমঝোতার অভাবের বহিঃপ্রকাশ এটি।’

জেপি/এমএআর/আরআইপি