জাতীয়

অধিক ফলনশীল পাটের নতুন চার জাত

সম্প্রতি গবেষকরা দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের নতুন চারটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ নতুন জাতগুলো হলো বিজেআরআই দেশি পাট -৯, বিজেআরআই তোষাপাট পাট -৭, বিজেআরআই মেস্তা -৩ এবং বিজেআরআই কেনাফ -৪। এগুলো একাধারে রোগ প্রতিরোধী, উচ্চফলনশীল, স্বল্পমেয়াদী ও খরা সহিষ্ণু।

Advertisement

জানা যায়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) দেশি পাট -৯, বিজেআরআই তোষা পাট -৭ ও বিজেআরআই মেস্তা পাট -৩ দেশব্যাপী চাষাবাদের জন্য ছেড়ে দেয়ার অনুমতি প্রদান করেছে। কৃষক পর্যায়ে এর সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

বিজেআরআই তোষামোদ পাট -৭ উগান্ডা থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচন করে উদ্ভাবন করা হয়েছে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ উপযোগী এ জাতটির আঁশের রং উজ্জ্বল সোনালি, ছালের পুরুত্বও বেশি এবং পাটকাঠিও তুলনামূলকভাবে বেশ শক্ত। তুলনামূলকভাবে নেমাটোড প্রতিরোধী এ জাতটি মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যায়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বপন করলে ফলন ভালো হয়। বপনের প্রায় ১১০ দিন পর কর্তন করা যায়। হেক্টরপ্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি বীজ বপন করলে ফলন পাওয়া যায় গড়ে হেক্টরপ্রতি তিন মণ।

ধবধবে সুন্দর আঁশ ও নীলাভ বীজের দেশি পাটের জার্মপ্লাজম এসিসি ১৮৩১ এর সঙ্গে নাবী বপনযোগ্য দেশি জাত সিভিএল -১ এর সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমে বিজেআরআই দেশি পাট -৯ জাতটির উদ্ভাবন করা হয়েছে।এ জাতের পাট যথাসময়ে কর্তন করে একই জমিতে রোপা আমন ও রবিশস্যের আবাদও করা যাবে। এ জাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্বল্পমেয়াদি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ সহিষ্ণু এবং সারা দেশব্যাপী আবাদযোগ্য। জাতটি বপনের উপযুক্ত সময় ৩০ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে ৭.৫ থেকে ৯ কেজি এবং সারিতে বপনের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৭.৫ কেজি বীজ দরকার। এর আঁশের ফলন ৪.৫ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

Advertisement

রাজবাড়ি জেলা সদরের খানখানাপুর ইউনিয়ন থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচনের মাধ্যমে মেস্তা -৩ উদ্ভাবন করা হয়েছে যা মালভেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শিকড় গিট রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় না। শুষ্ক অঞ্চলের প্রান্তিক জমি এবং উচুঁ, মাঝারি উচুঁ, খরাপ্রবণ চরাঞ্চলের পতিত বেলে জমি এ জাতটির চাষাবাদের জন্য উপযোগী। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। ছিটিয়ে বপনের জন্য হেক্টরপ্রতি ১৪ -১৬ কেজি এবং সারিতে বপনের জন্য ১১ -১৩ কেজি বীজ দরকার। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫ টন পর্যন্ত হতে পারে।

অপরটি হচ্ছে লাল রঙের বিজেআরআই কেনাফ -৪ যা দ্রুত বর্ধনশীল, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ও প্রান্তিক জমিতে চাষের উপযোগী। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত পাট ও পাটজাতীয় ফসলের ৪৮টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে তোষা পাট ১৬ টি, দেশি পাট ২৫ টি, মেস্তা ৩টি ও কেনাফ ৪টি। জাতগুলোর মধ্যে ২০টির বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

উদ্ভাবিত নতুন এ জাতগুলো সম্পর্কে বিজেআরআই’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আল - মামুন বলেন, বিশ্বে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দীর্ঘদিন অবহেলিত হওয়ার পর আবারও তার হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরাও পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপক। পাট চাষের সেই হারানো সোনালি দিন আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

পাট গবেষণা কেন্দ্রের প্রজনন বিভাগের প্রধান ড. চন্দন কুমার সাহা বলেন, আবিষ্কৃত নতুন জাতগুলো বাংলাদেশকে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Advertisement

ওআর/জেআইএম