দেশজুড়ে

`বাড়ির বুড়ি` দিয়ে বন্ধ হবে পরিবেশ দূষণ

দেশের বিভিন্ন নগর, মহানগর, শহরে বসবাসকারী সকলের বাড়ি থেকেই রান্নার কাজে ব্যবহৃত অবশিষ্টাংশ বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় বা ডাস্টবিনে ফেলেন। এই আবর্জনা পরিবেশকে যেমন দূষিত করে তেমনি জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে নওগাঁর এস,এম ইব্রাহীম হোসেন রাজুর পরিকল্পনায় টেকনিসিয়ান হাফিজ এবং বাস্তবায়নকারী রাশেদুজ্জামান এই তিন যুবক তৈরি করেন `বাড়ির বুড়ি` যন্ত্রটি। গত চার বছর ধরে পরিকল্পনা আর পরিশ্রম দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গত মার্চ মাসে তৈরি করা হয় এই যন্ত্র। এই যন্ত্র পরিবেশ দূষণ থেকে পরিবশেকে রক্ষা করে আর্বজনা দিয়ে জৈব সার তৈরি করছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা সম্ভব হবে, অপরদিকে কৃষক স্বল্প মূল্যে জৈব সার ব্যবহার করে লাভবান হবে।বাস্তবায়নকারী রাশেদুজ্জামান জানান, বাড়ি, হোটেল, রেঁস্তোরা বা বিভিন্ন স্থানের আর্বজনা যেমন- শাকসবজির অবশিষ্টাংশ আলু, পটল, বেগুন, আদা, রসুন, পেঁয়াজের খোসা, মাছের আঁশ, হাস মুরগির নাড়ি-ভুড়ি ও খাওয়ার পরে চাবানো হাড়, মাছের কাঁটা ইত্যাদি যেসব মানুষের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রয়েছে সেসবকে বাড়ির বুড়ির সাহায্যে একত্রিত করে গলিত আকারে বের করা হয়। গলিত অংশকে রৌদ্রে শুকিয়ে গুড়ো করলে তৈরি হবে শুকনো জৈব সার বা অর্গানিক ফার্টিলাইজার সার। যা অনায়াসে পুকুরে বা জমিতে ব্যবহার করা যাবে।  এগুলো বাজারে প্রচলিত রাসায়নিক সার হতে অনেক উন্নত এবং রাসায়নিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত। ফলে এই যন্ত্রকে ব্যবহার করে যেমন আর্বজনা মুক্ত পরিবেশ পাওয়া সম্ভব তেমনি এই আর্বজনা দিয়েই তৈরি হবে জৈব সার। পলি ব্যাগ, গরু খাসির বড় বড় হাড় এবং যাবতীয় প্লাস্টিক দ্রব্য এই যন্ত্রে ব্যবহার করা যাবে না।টেকনিসিয়ান হাফিজ জাগো নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে দুটি পরিবেশ বান্ধব যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। ছোটটি তৈরি করতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ও বড়টি ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব যন্ত্রে ১ হর্ষের মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। এই মেশিনের বৈদ্যুৎ খরচ ঘণ্টায় আড়াই ইউনিট অর্থাৎ সাড়ে ১২ টাকা খরচ হয়। এই মেশিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে মোটর, বেল্ট, পুলি, ট্যাংক, স্যাফট, ব্লেড, হিটার, অ্যাঙ্গল ফ্রেম, কাঠের বাক্স, হিট প্রুফ পেপার, ড্রিল মেশিন, হ্যান্ড শান, অ্যাঙ্গেল, প্লেন শিট, ওয়েল্ডিং মেশিন। পরিকল্পনাকারী এস,এম ইব্রাহীম হোসেন রাজু জাগো নিউজকে জানান, শহরের উঁচু ভবনগুলোতে বসবাসকারীরা আর্বজনা পরিস্কার করতে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেন। কিন্তু যারা এই আর্বজনা নিয়ে যাচ্ছেন তারা আবার এই আর্বজনা নগরীর বড় বড় রাস্তার পাশে বা কোন ভাগাড়ে ফেলে রাখেন। যার ফলে আর্বজনা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ায়। এই মেশিন ব্যবহারের ফলে ওই সমস্ত রাস্তা হবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ হবে দুষণমুক্ত। যেহেতু এখানে পানি পরিস্কার ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হচ্ছে সেহেতেু এই মণ্ডে বা তরলে কোন দুর্গন্ধ হবে না এবং জীবাণুমুক্ত থাকব। ফলে আর্বজনা পরিস্কার করতে বর্তমানে যে ব্যয় হয় তা কমপক্ষে ৮০ ভাগ কমে যাবে। এক কেজি আবর্জনাকে গলিয়ে শুকানোর পর জৈব সার হবে প্রায় দেড়শ গ্রাম। জৈব সার তৈরি করে নিজেও ব্যবহার করা যাবে এবং বিক্রয় করে বাড়তি অর্থ আয় করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, দিন দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মেশিন বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়ি থেকে আর্বজনা সংগ্রহ করে তা থেকে জৈব সার তৈরি করে বাজারজাত করণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। আমাদের এই প্রচেষ্টা বেকারত্ব দূরিকরণে সামান্যতম হলেও প্রভাব ফেলবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা জাগো নিউজকে জানান, এই উদ্যোগ গ্রহণকারীকে জৈব সার নিবন্ধন হওয়ার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যে কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে অধিক পরিমাণে জৈব সার উৎপাদন সম্ভব হবে। এতে কৃষকদের মাঝে খুব কম মূল্যে জৈব সার সরবরাহ সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।এমজেড/পিআর

Advertisement