বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)উপাচার্য অধ্যাপক ড.একেএম নূর-উন-নবীর চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ মে)।শুক্রবার থেকে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপ-উপাচার্য পদ শূন্য থাকা এবং দীর্ঘ সময় ধরে কোষাধ্যক্ষ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে।২০১৩ সালের ৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড.একেএম নূর-উন-নবীকে চার বছরের জন্য বেরোবির উপাচার্য নিয়োগ দেয় সরকার।শুক্রবার তার মেয়াদ শেষ হয়।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় উপাচার্য একাই কোষাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, তিনটি অনুষদের ডিন (জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ); ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-ই-লার্নিং সেন্টার; বহিরাঙ্গন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতর এবং জনসংযোগ দফতরের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।এছাড়াও দুইটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নূর-উন-নবী। ফলে উপাচার্য পদটি শূন্য হওয়ায় তার দায়িত্বে থাকা অন্যান্য পদগুলোও শূন্য হচ্ছে।এদিকে, ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপ-উপাচার্যের পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে উপাচার্য পদটি শূন্য হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালনেরও কেউ থাকছে না। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপ-উপাচার্যের পদ থাকলেও এ পদের নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব নেই। উপ-উপাচার্য প্রধানত উপাচার্যের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। এতে উপাচার্যের ওপর চাপ কম থাকে এবং প্রশাসনিক কাজও দ্রুত সম্পন্ন হয়। তবে বর্তমানে উপ-উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ একাই উপাচার্যকে করতে হয়েছে। ফলে উপ-উপাচার্য ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সিনেট, সিন্ডিকেট, ফাইন্যান্স কমিটি, অ্যাকাডেমিক কমিটিসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সভা।অপরদিকে, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদটি শূন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত সব কাজ কোষাধ্যক্ষের হাত দিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও কোষাধ্যক্ষ না থাকায় উপাচার্য অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেটি দেখভাল করেছেন। কিন্তু এখন পদটি শূন্য হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থসংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি ফাঁকা থাকায় অর্থ সংক্রান্ত কাজে অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। এতে অর্থসংক্রান্ত সব কাজ, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পরীক্ষার কমিটি গঠন, মূল সনদপত্র উত্তোলন, ভর্তি কার্যক্রম, ফিন্যান্স কমিটি, অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা, অন্যান্য আর্থিক খাত, বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনের অনুমোদনের কাজ থমকে যাবে।এছাড়া দফতরগুলোতে আসবে মন্থর গতি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টরা চরম বিড়ম্বনায় পড়বেন বলেও সংশ্লিষ্টরদের আশঙ্কা।বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদের নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি)।এরইমধ্যে এসব পদে নিয়োগ পেতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দফতরে জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক ও নেতা। তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের কে কতটুকু দক্ষহাতে প্রশাসন চালাতে পারবেন তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশের অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিনটি পদ ফাঁকা থাকায় অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিকসহ নানাসহ কাজ বাধাগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। তাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দিয়ে এই জটিলতা নিরসন করতে না পারলে শিক্ষা কার্যক্রম চরম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর জাগো নিউজকে বলেন, উপাচার্য পদটি শূন্য হওয়ার বিষয়টি এখনো সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়নি। বিষয়টি জানাতে আরও কিছুদিন সময় নেবেন বলে তিনি জানান।অন্যদিকে, আগামী ৭ মে থেকে শুরু হচ্ছে বেরোবির গ্রীষ্মকালীন ছুটি।এতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ছুটি চলবে ১১ মে এবং একাডেমিক ছুটি চলবে ১৪ মে পর্যন্ত।
Advertisement
নয়ন/এসআর