শিক্ষা

মেধাবৃত্তিতে নেই মেধাবীরা

প্রাথমিক সমাপনীর বৃত্তি নিয়ে বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মেধাবৃত্তিতে মেধাবীরা বাদ পড়েছে। দেশের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসগুলোতে এমন প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। তাই ফলাফল পুনর্নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

Advertisement

গত ১১ এপ্রিল প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে চলতি বছরের বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এবার সারাদেশে বৃত্তি পেয়েছে ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। এরপরই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। মেধাবীরা বৃত্তি না পেয়ে এ অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অনেকে মেধাবৃত্তি পেয়েছে যাদের বৃত্তি পাওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। একশ্রেণির শিক্ষক অনিয়ম করে তাদের বৃত্তি দিয়েছেন। মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মে জড়িত।

অভিযোগে তারা বলেছেন, বৃত্তি তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ ও পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন জমা দেয়া হলেও শিক্ষা অফিসগুলো তা আমলে নেয়নি। যদি বৃত্তির তালিকা পুনর্মূল্যায়ন হতো তাহলে অনেক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হতো।

Advertisement

এদিকে, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডিপিইতে খোলা চিঠি পাঠান। তাতে তিনি দাবি করেন, পিইসি ফল তৈরিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিন লাখ টাকার বিনিময়ে কিছু শিক্ষার্থীকে নম্বর কম-বেশি দিয়েছেন। ডিপিই অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ৪ এপ্রিল ডিপিইও শেখ অহিদুল আলম তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান ডিপিইতে যেখানে অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

ডিপিই সূত্র জানায়, মেধাবীরা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও বৃত্তি না পাওয়ায় শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বৃত্তির ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযোগ আসছে। অনেকে স্থানীয় জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর অভিযোগ করছেন। কেউ আবার সরাসরি সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে পাঠাচ্ছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে অভিযোগকারী টাঙ্গাইলের আব্দুল বারেক মিয়া বলেন, তার ছেলে আশিকুর রহমান প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়েছে। সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অথচ ক্লাসে তার চাইতে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি দেয়া হয়েছে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ক্লাসের সেরা ছাত্র হয়েও ছেলেকে মেধাবৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সন্তানের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই ন্যায্য বিচার পেতে মামলার কথা জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

গাইবান্ধার প্রায় শতাধিক মেধাবীর সাঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। অভিভাবক মো. মেয়াম্মেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ছোট থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা মেধার পরিচয় দিয়ে আসছে, মেধাবৃত্তিতে তাদের নাম নেই। অথচ ভালো রেজাল্ট না করেও অন্যদের মেধাবী হিসেবে বৃত্তি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক ও জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের অসাধু কর্মকাণ্ডের ফলে মেধাবীরা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে গেলেও কোনো ফল হয়নি বলে জানান তিনি।

যশোর জেলার আব্দুল রাজ্জাক অভিযোগ করেন, তার ছেলে ক্লাসের সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে একই ক্লাসের অন্য ছেলেরা কম নম্বর পেয়ে মেধাবৃত্তি পেয়েছে। বৃত্তি না পেয়ে তার ছেলে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন তিনি।

এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে ডিপিই মহাপরিচালক আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/এমএস