ইয়েমেন যুদ্ধের বলি হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে হাজারো ইয়েমেনি শিশু। এরকমই এক শিশু জামিলা আলী আব্দুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। না ফেরার দেশে যাওয়ার আগে হাসপাতালে দেখা যায়, সাত বছর বয়সী এই শিশুর দুই চোখ নিভু নিভু, অর্ধেক কোটরে ঢুকে গেছে। ইয়েমেনের হোদাইদাহ হাসপাতালের অপুষ্টি ওয়ার্ডে ১২ দিন ধরে পড়ে ছিলেন অর্ধ-মৃত এই শিশু।
Advertisement
অতিমাত্রায় ক্ষুধার্ত জামিলার মতো শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল। সাত বছর বয়সী ক্ষীণকায় মলিন এই শিশুর কপালে জোটেনি ভালোমানের চিকিৎসা। ফলে অকালে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ও ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে দুই বছরের যুদ্ধ আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ইয়েমেনকে গভীর মানবিক সংকট ফেলেছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি অার্থিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। দেশটির মৌলিক দ্রব্যসামগ্রী পরিবহনের জন্য সড়ক ও সেতুগুলো অবিরাম বোমা বর্ষণে ধ্বংস হয়েছে।
কৃমিতে ভুগছিলেন জামিলা। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এছাড়া রাজধানী সানার কোনো হাসপাতালে তার বিশেষ চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সামর্থ্যও ছিল না পরিবারের।
Advertisement
জামিলার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে শোকগ্রস্ত তার বাবা আলি বলেন, ‘গত দুই বছর জামিলার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হয়। আমরা সবসময় হাসপাতালে গিয়েছি, তারা আমাদেরকে বলেছেন, সে কৃমি ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত। আমরা কোথাও যেতে পারিনি। আমরা দরিদ্র মানুষ। সানাসহ আমরা অন্য কোথাও যেতে পারিনি।’
এমনকি যুদ্ধের আগেও গ্রামবাসীরা বেঁচে থাকার অবিরাম লড়াই করেছেন। ইয়েমেনের লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ যুদ্ধের আগে থেকে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও ওষুধের জন্য লড়াই করে আসছেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হাজার হাজার বিমান হামলা ইয়েমেনের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, ইয়েমেনে প্রত্যেক ১০ মিনিটে পাঁচ বছর বয়সী অন্তত একজন শিশু মারা যাচ্ছে। প্রতিরোধযোগ্য অনাহার, রোগ-ব্যাধি, দরিদ্র স্যানিটেশন ব্যবস্থা অথবা চিকিৎসা সেবার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে এসব শিশু।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাস ইয়েমেনের পুরো একটি প্রজন্ম ক্ষুধার্ত ও বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
Advertisement
ইয়েমেনের দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া আরো প্রায় ৭০ লাখ মানুষ জানেন না তারা কোথায় খাবার পাবেন।
নরওয়ের শরণার্থী পরিষদের প্রধান জ্যান ঈগল্যান্ড সম্প্রতি ইয়েমেন সফর গিয়ে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বিদেশি শক্তিগুলো ইয়েমেনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিরোধযোগ্য এই ভয়াবহ বিপর্যয়কে পুরোপুরি মানবসৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জ্যান ঈগল্যান্ড বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির বড় ধরনের ব্যর্থতা। ইয়েমেনের লোকজন বন্দুক এবং ক্ষমতার মাঝে পড়েছে। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পক্ষগেুলো প্রতিরোধযোগ্য দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করেছে। এর ফলে লাখ লাখ শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
সূত্র : রয়টার্স।
এসআইএস/এমএস