অর্থনীতি

প্রিমিয়ার সিমেন্টের সাড়ে ৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার সিমেন্টের বিরুদ্ধে আট কোটি ৪১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬৮ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিরীক্ষা এবং গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টের তুলনায় প্রিমিয়ার সিমেন্টের বিক্রয় হিসাব বইতে দুই কোটি ২৫ লাখ ৫ হাজার ১০৭ টাকা রাজস্ব কম দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ধরে নেয়া হচ্ছে এ পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধ করা হয়নি বা ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি উৎসে মূসক, অতিরিক্ত রেয়াত গ্রহণ এবং কম উপকরণ দিয়ে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমেও কম রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়ার সিমেন্ট সেবা গ্রহণের বিপরীতে উৎসে মূসক কম পরিশোধ করেছে দুই কোটি ২৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫৫ টাকা। এছাড়া যে পরিমাণ রেয়াত পাওয়ার কথা এর থেকে বেশি রেয়াত এক কোটি এক লাখ ১৭ হাজার ৯৭৬ টাকা নেয়া হয়েছে এবং কম উপকরণ দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের বিপরীতে আদায়যোগ্য মূসক দুই কোটি ২৮ লাখ ২৩০ টাকা।

অর্থাৎ প্রিমিয়াম সিমেন্টের রাজস্ব কম পরিশোধের পরিমাণ সাত কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৪৬৮ টাকা। এর সঙ্গে সেবা গ্রহণের বিপরীতে উৎসে মূসক কম দেয়ায় সুদ ধরা হয়েছে ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোট আদায়যোগ্য রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়ায় আট কোটি ৪১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। যা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করতে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

Advertisement

এদিকে মূসক নিরীক্ষ, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২ আগস্ট প্রিমিয়াম সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. ছানা উল্যাহ, মো. হাবিবুর রহমান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এম আবুল হোসেনের উপস্থিতিতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পক্ষে কোম্পানি সেক্রেটারি মো. শফিউর রহমানের বক্তব্য নেয়া হয়।

সে সময় মো. শফিউর রহমান নিরীক্ষায় উদঘাটিত কম রাজস্ব দেয়ার কিছু বিষয়ে দ্বিতম পোষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রতিনিধির কাছে দ্বিমত পোষণের স্বপক্ষে লিখিত বক্তব্য ও দলিলাদি চাওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঠান লিখিত বক্তব্য ও দলিলাদি যাচাই-বাছাই করে নিরীক্ষা কর্মকর্তারা ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সংশোধিত প্রতিবেদন তৈরি করেন।

ওই সংশোধিত প্রতিবেদনে আদায়যোগ্য রাজস্বের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় আট কোটি ৪১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬৮ টাকা। যা প্রথম নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল আট কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৭০ টাকা।

সংশোধিত প্রতিবেদনে যে ১৬ লাখ ৭ হাজার ২ টাকা বাদ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে আছে- ফ্লাই এ্যাশের বিপরীতে রেয়াত ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮০ টাকা, আপ্যায়ন খাতে উৎসে কর্তনযোগ্য মূসক বাবদ দুই লাখ ৬৫ হাজার ১০৬ টাকা এবং উৎসে কর্তিত মূসকের উপর প্রযোজ্য সুদ ৮২ হাজার ১৬ টাকা।

Advertisement

প্রতিবেদনে প্রিমিয়ার সিমেন্টের রাজস্ব পরিহারের (ফাঁকি) বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টের তুলানায় বিক্রয় হিসাব পুস্তক দুই কোটি ২৫ লাখ ৫ হাজার ১০৭ টাকা, সেবা গ্রহণের বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে মূসক বাবদ দুই কোটি ২৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫৫ টাকা এবং সুদ ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা, প্রাপ্যতার তুলনায় অতিরিক্ত গৃহীত রেয়াত বাবদ এক কোটি এক লাখ ১৭ হাজার ৯৭৬ টাকা এবং সরেজমিন প্রাপ্ত কম উপকরণ দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের বিপরীতে আদায়যোগ্য মূসক বাবদ দুই কোটি ২৮ লাখ ২৩০ টাকা। সর্বমোট পরিহার করা রাজস্বের পরিমাণ আট কোটি ৪১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছ থেকে পরিহার করা ওই রাজস্ব আদায়সহ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে গত মাসে মূসক বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনারের কাছে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক প্রকাশ দেওয়ান একটি চিঠিও পাঠান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক ড. মোহা. আল-আমিন প্রামাণিক জাগো নিউজকে বলেন, আমি এ অধিদফতরে নতুন যোগদান করেছি। প্রতিবেদনটি এখনও আমার নজরে আসেনি। প্রিমিয়ার সিমেন্টের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কতো ধরনের অভিযোগই ওঠে। আমরা এখনও রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সংক্রান্ত কোনও প্রতিবেদন পায়নি। রজস্ব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পেলে এরপর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারব। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, আমাদের হিসাব স্বচ্ছ।

এমএএস/এমএআর/জেআইএম