আন্তর্জাতিক

হিন্দু বোনের চিতায় কাঠ সাজালেন মুসলিম বৃদ্ধ

পাতানো এক হিন্দু বোনের চিতায় কাঠ সাজালেন এক মুসলিম বৃদ্ধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শ্মশানে এ ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থানার জয়পুর এলাকার সাত্তার মণ্ডল (৮৬) তার পাতানো হিন্দু বোন মৃন্ময়ি সরকারের (৯২) মৃত্যুতে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। শনিবার তাকে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যান। এরপর তার চিতায় নিজেই কাঠ সাজান। এ সময় সাত্তারের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নামছিল। ঝাপসা চোখে বিড়বিড় করে বলছিলেন, দিদিরে আর দেখা হবে না? তুই চলে গেলি রে দিদি?

সাত্তার জানান, বহু দিন আগের কথা। দিদিরা বাংলাদেশ থেকে এসে এখানে বাড়ি করে। একই সঙ্গে আমাদের বসবাস। একদিন আমাকে বাড়িতে ডেকে ভাই বলে সম্বোধন করেছিল। তখন আমার বয়স ৩৮। সেই থেকে একে অন্যের বাড়িতে আসা যাওয়া। এক পাতেই পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া চলত। হিন্দু-মুসলিম বলে কোনো রকম ভেদাভেদ ছিল না আমাদের। আজও এ বাড়ির রান্না ও বাড়িতে যায়।

কৃষ্ণেন্দু বাবু নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তার বন্ধুর ঠাকুর মা’র প্রয়াণের জন্যই তিনি শ্মশানে গিয়েছিলেন। সেখানেই দেখেন এক ভদ্রলোককে। মুসলিমকে দেখে একটু চমকে গিয়েছিলেন তিনি। পরে বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন সাত্তারকে ভাইয়ের চোখেই দেখতেন তার ওই বন্ধুর ঠাকুর মা। যাকে ধর্মভাই বলা হয়।

Advertisement

হিন্দু বোনের অসুস্থতার খবর পেয়েই সাত্তার পৌঁছে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। মাথার কাছে বসে নামাজ পড়েছেন, দোয়া করেছেন তিনি। কীর্তন আর নামাজ সেখানে চলেছে একসঙ্গে। বোন মারা যাওয়ার পর নিজের হাতে চিতা সাজিয়ে তুলেছেন।

গ্রামবাসীরা জানান, সাধারণ মানুষ ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি করে না। যদি দু’টি মন্ত্র পড়াই হয়, তাতে কি ধর্ম খোয়া যাবে? ওই যুবককে তাঁরা ভাইয়ের মতোই দেখতেন। আর সেই ভাই শেষের দিনে সঙ্গ না দিলে যে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করত না বলেই মনে করেছিলেন গ্রামবাসীরা।

কয়েকদিন আগে মালদহে এক হিন্দু হতদরিদ্র পরিবারের যুবকের সৎকারে এগিয়ে এসেছিলেন মুসলিম গ্রামবাসীরা। হিন্দু মন্দিরের জন্য অনায়াসে পৈতৃক জমিদান করেছেন এক মুসলিম পরিবার। এবারে হিন্দু বোনের চিতা সাজালেন এই বৃদ্ধ।

এরকম ধর্মভাইয়ের সংখ্যা অারও বেশি হলে, পৃথিবীটা হয়তো অন্যরকম হয়ে উঠতো। অনেক হতাশার মধ্যেও, অনেক বিভাজনের কাহিনির মধ্যেও তাই ভরসা জোগায় এই দৃষ্টান্তগুলো।

Advertisement

কেএ/এসআইএস/এমএস