মতামত

যে মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়

কিছু কিছু মৃত্যু আছে যার দায় এড়ানো যায় না। গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মেয়েসহ বাবার আত্মহত্যার ঘটনাটি আমাদের অপরাধী করে দেয়। সমাজ ব্যবস্থার একটি ঘুণে ধরা চিত্রও ফুটে উঠে এর মধ্য দিয়ে। মানবিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও মহানুভবতা যেন সমাজ থেকে দিন দিন লোপ পাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধ ছাড়া একটি সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। অবক্ষয়ের চূড়ান্তে পৌঁছানোর আগেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। একটি মানবিক ও ন্যায়ানুগ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকেই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

Advertisement

গত শনিবার সকালে শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে শ্রীপুরের সিটপাড়া গ্রামে দিনমজুর হযরত আলী ও তার পালিত মেয়ে আয়েশা আক্তারের মৃত্যু হয়। হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমের অভিযোগ- তার মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে স্থানীয় বখাটে ফারুক। এলাকার মানুষ টের পেয়ে ওই মেয়েকে রক্ষা করে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও থানা পুলিশকে জানিয়ে প্রতিকার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন হযরত আলী। এ অভিযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় হালিমা বেগম ওই ইউপি সদস্যসহ সাতজনের বিরুদ্ধে কমলাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। সোমবার ওই মামলায় আবুল হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।

মেয়ের সাথে পাশবিকতার যদি বিচার পেত হযরত আলী তাহলে হয়তো এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হতোনা মেয়ে-বাবাকে। বিচার চাইতে গিয়ে জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে যদি উল্টো আপোস মীমাংসা ও টাকা লেনদেনের মতো ঘৃণ্য প্রস্তাব আসে তাহলে একজন অসহায় পিতার আর কী করার থাকে? এ ধরনের জনপ্রতিনিধি সমাজের কোন কাজে লাগে? এ কেমন জনপ্রতিনিধি যে অন্যায়ের বিচার তো দূরের কথা সেটিকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করেন। এ কারণে যে অসহায় দু’টি জীবন চলে গেল তার দায় নেবে কে? অন্ধ হলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না। একটি সমাজকে সুস্থ ধারায় চলতে হলে প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হতে হবে। ন্যায় বিচার ছাড়া অন্যায় থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই এ ঘটনায় দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অমানবিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রতিরোধে সমাজতাত্ত্বিকদেরও ভাবতে হবে করণীয় নিয়ে।

এইচআর/পিআর

Advertisement