ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামের সাজু নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম করছেন। কিছুদিন ধরে ওই তরুণী সাজুকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। পাশাপাশি অনেক টাকা দেনার মধ্যে ছিলেন সাজু।তাই মোটা অঙ্কের অর্থ কীভাবে পাওয়া যায় সেজন্য পরিকল্পনা শুরু করেন সাজু। সেই অনুযায়ী প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণের চিন্তা করেন তিনি।কিন্তু সাজুর পক্ষে একাই অপহরণ করা সম্ভব হবে না বলে পারিবারিক কলহের জেরকে কাজে লাগিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তুষারের মামা সেতু, চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করেন রাজু।সাজুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল বুধবার মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে অপহরণ করা হয়। সেই অপহরণের বিষয়টি প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলাম টের পেলে সাজুর কাছে ফায়দা নেয়ার জন্য তুষারকে জিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুদিনের মধ্যে তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলে তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জানান সিরাজুল।অপহরণের আগে সেতু তার মায়ের মোবাইল চুরি করেন অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির জন্য। অপহরণের দিন সকালে প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলামের বাড়ি গিয়েছিলেন তুষার। ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে সিরাজুল ইসলামের ছেলে শান্তর (১৫) কোলে দেখা যায়। সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়। নিখোঁজের ঘণ্টা ছয়েক পর চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে তুষারের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন সাজু। পরে তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীশংকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিষয়টি টের পেয়ে অপহৃতরা শিশু তুষারকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে একটি বস্তায় ভরে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে সেতু, শান্ত ও রিপনসহ কয়েকজন গলা ও হাতের রগ কেটে শিশু তুষারকে হত্যা করে।রোববার ঠাকুরগাঁও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা আক্তার খানের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এভাবেই জবানবন্দি দিয়েছেন তুষারের মামা সেতু। পরে আদালত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক নয়জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তবে এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সাজুকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।গত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামে শিশুটির মরদেহ বাড়ির পাশের একটি খড়ের গাদা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা সন্দেহে মূলহোতাসহ নয়জনকে আটক করে পুলিশ।অপরদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ শিশু তুষার হত্যায় নয়জনকে আটক করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহম্মেদ, রানীশংকৈল থানা পুলিশ সার্কেল এসপি মো. হাসিব, সদর থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমান, ওসি-তদন্ত মান্নান প্রমুখ।পুলিশ সুপার ফারহাত আহম্মেদ জানান, পুলিশ প্রথম থেকে শিশু তুষারকে জীবিত উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তির তথ্য গোপন করার কারণে তুষারকে জীবিত উদ্ধার কেরা যায়নি। তবে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে। দ্রুত সাজুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।মো: রবিউল এহসান রিপন/এএম/পিআর
Advertisement