দেশজুড়ে

নিরবে চলে যাচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন

নিরবে কেটে যাচ্ছে অস্কার বিজয়ী কালজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। তার স্মৃতি বিজরিত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া জমিদার বাড়ির প্রতিটি ইটে মিশে আছে সত্যজিত রায়ের স্মৃতি। তবে এখানে তার জন্মদিন পালনে নেই কোনো উদ্যোগ। প্রখ্যাত ছড়াকার সুকুমার রায়ের ছেলে সত্যজিত রায় ১৯২১ সালের ২ মে জন্মগ্রহণ করেন।বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন ও মধ্যযুগের পর আলো-আধাঁরী যুগের অন্ধকার সরিয়ে যে সকল মহাপুরুষ শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতির আকাশে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাদেরই একজন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও মুদ্রণ শিল্পী উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তার ছেলে প্রখ্যাত ছড়াকার তৎকালীন সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদক সুকুমার রায়। আর সুকুমার রায়ের ছেলে অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।ঊনবিংশ শতাব্দির শেষদিকে বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বের মানচিত্রে যারা পরিচিত করে তুলেছিলেন, কিশোরগঞ্জের মসুয়া রায় জমিদার পরিবার হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। কিন্তু, অনাদর অবহেলায় পড়ে সুষ্ঠু রক্ষোবেক্ষণের অভাবে আজ হারাতে বসেছে রাজ বাড়ির সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। বিলুপ্তির পথে সত্যজিতের স্মৃতি বিজরিত মসুয়া জমিদার বাড়ি। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জমিদার বাড়ি। এরই মধ্যে জমিদার বাড়ির সরকারি মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ জমি বেদখল হয়ে গেছে।জানা গেছে, উপেন্দ্র কিশোর রায় ১৮৬৩ সনে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কটিয়াদী থানার মসুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার চাচা হরি কিশোর রায় ছিলেন এলাকার জমিদার। নিঃসন্তান হরি কিশোর রায় ১৮৬৮ সালে উপেন্দ্র কিশোর রায়কে দত্তক নেন। যদিও পরবর্তীতে তার একটি ছেলে সন্তান হয়েছিল। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে ছিলেন প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। আর অস্কার পদক প্রাপ্ত কালজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় ছিলেন সুকুমার রায়ের ছেলে।একসময় কটিয়াদীর মসুয়া জমিদার বাড়ির সুখ্যাতি ছিল। জমিদার বাড়ির পূর্বে শান বাধানো ঘাট, পূর্বে সুউচ্চ প্রাচীর ও দৃষ্টিনন্দন সিংহ দরজা আকৃষ্ট করতো  মানুষকে। বাড়ির মূল ভবনটি এখনও ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে। এর পশ্চিমে জরাজীর্ণ ভবনটি বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জানা গেছে, জমিদার বাড়ির প্রাচীন ভবনটি ছিল দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত। বাড়িতে ছিল বাগান বাড়ি, হাতীর পুকুর ও খেলার মাঠ। এখন এগুলো কেবলই ইতিহাস।সুকুমার গবেষক ও বিশিষ্ট ছড়াকার অ্যাডভোকেট নবী হোসেন বলেন, কালের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সত্যজিৎ রায়, সুকুমার রায়, ও তাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজরিত জমিদার বাড়ির ভগ্নপ্রায় ইটের প্রাসাদ। সামনে বিশাল আয়তনের পুকুর। জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়েছে দ্বিতল প্রাসাদটি। একসময় প্রায় ২ একর আয়তন ছিল রাজবাড়ির। বর্তমান বিশাল পুকুর এবং মূলবাড়িটি সরকারের মালিকানাধীন থাকলেও প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে বাড়ির বেশির ভাগ জমি।সুকুমার রায়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য স্থানীয় লোকজন সুকুমার স্মৃতি সংসদ গড়ে তুলেছে। ক’বছর ধরে তার নামে দেওয়া হচ্ছে সাহিত্য পদক।কটিয়াদীর বাসিন্দা সুকুমার গবেষক ছড়াকার নবী হোসেন জানান, প্রতি বছর বৈশাখের শেষ বুধবার জমিদার বাড়ির আঙিনায় বসে বৈশাখী মেলা। রায় চৌধুরীর পরিবারের স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে সত্যজিৎ রায় ফাউন্ডেশন।বাংলা সাহিত্যের তিন দিকপাল সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায় ও উপেন্দ্র রায়ের স্মৃুতি বিজরিত কিশোরগঞ্জের মসুয়া জমিদার বাড়িটি অবিলম্বে সংস্কার করে এখানে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।এমএএস/আরআই

Advertisement