এমনিতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জ ঠেকানো দায়। আর ইন্টারনেট চালু করলে তো কথাই নেই, প্রথমে ব্যাটারি গরম, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চার্জ ফুরিয়ে লালবাতি জ্বলে ওঠে।
Advertisement
নতুন করে যোগ হয়েছে ব্যাটারি ফুলে যাওয়া, যা স্যামসাং গ্রাহকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যাটারি খুলে রাখছেন অনেকে। একের পর এক সমস্যায় অতিষ্ঠ স্যামসাং বাংলাদেশের গ্রাহকরা।
রেজাউন নাহার নামের এক গ্রাহকের অভিযোগ, স্যামসাং গ্যালাক্সি গ্র্যান্ড প্রাইম সেটটি কেনার পর থেকে ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেয়। তিনি জানান, নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করলে মোবাইল গরম হয়ে ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয় চার্জ। কয়েক মাস পর দেখি সেটের ব্যাটারি ফুলে গেছে। মোবাইল হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাটারি ফোলা দেখে খুলে রেখে দেই।
সেট কেনার পাঁচ মাসের মাথায় আতিকুর রহমান আতিক নামে আরেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তার স্যামসাং গ্যালাক্সি জে-ফাইভ সেটের ব্যাটারি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এছাড়া চার্জ দ্রুত চলে যাচ্ছে। একই অভিযোগ সাভারের পিয়াল নামের আরেক গ্রাহকের। অভিযোগকারীদের অভিযোগের কপি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে।
Advertisement
সেট গরম হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিষয়টি ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করে স্যামসাং বাংলাদেশের টিম সাপোর্ট স্কোয়াড। ফেসবুকে তারা জানায়, স্মার্টফোনের তাপ বেশি থাকে। গরম হওয়া স্বাভাবিক। তবে যদি কেউ বেশি গরম মনে করেন তবে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে যেতে হবে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, সাধারণত গ্যাসফর্মের কারণে ব্যাটারি ফুলে-ফেঁপে যেতে পারে। ব্যাটারি ফুলে যাওয়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফুলে যাওয়া ব্যাটারি দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে।
আসাদুল্লাহ আল গালিব নামে স্যামসাংয়ের আরেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, গত ৩০ নভেম্বর তিনি স্যামসাং জে-টু প্রাইম হ্যান্ডসেটটি কেনেন। পরদিন ১ ডিসেম্বর হ্যান্ডসেটের চার্জার নষ্ট হয়ে যায়। কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে তারা চার্জার এবং সেট জমা রাখতে বলেন। ১২ দিন পর তারা চার্জার ও সেট একসঙ্গে ফেরত দেন। চার মাস পর মার্চের ২ তারিখ হেডফোন নষ্ট হলে স্যামসাংয়ের সার্ভিস সেন্টারে যাই। আবারও হেডফোনের সঙ্গে তার মোবাইল জমা রাখতে হয়। ১২ দিন পর ফেরত দেওয়া হয়।
আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে ওয়ারেন্টি থাকা সত্ত্বেও কেন তারা বারবার সেট জমা নিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। একজন মানুষ সেট ছাড়া কিভাবে চলবে?
Advertisement
এ বিষয়ে স্যামসাং বাংলাদেশ জাগো নিউজকে জানায়, ‘স্যামসাংয়ের চার্জার, হেডফোন ও ব্যাটারির সার্ভিসের জন্য ওই নির্দিষ্ট হ্যাডসেটের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। তাই গ্রাহকের কাছ থেকে হ্যান্ডসেটটি সার্ভিস সেন্টারে রেখে দিতে হয়।’
পল্লব আচার্য নামের স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ফাইভের ব্যবহারকারী জাগো নিউজকে জানান, তিনি কয়েক মাস আগে ৫৯ হাজার ৯২০ টাকা দিয়ে জিপি সেন্টার থেকে একটি হ্যান্ডসেট কেনেন। কয়েক মাসের মধ্যে এর ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেয়। চার্জার খুললেই কয়েক মিনিটের মধ্যে মোবাইল বন্ধ। পল্টনের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে তারা এলসিডি, ব্যাটারি ও চার্জিং লজিক-এ (Charging Logic) সমস্যার কথা বলেন। মেরামতের জন্য ১২ হাজার ৯০০ টাকা চান। অথচ আমি মোতালেব প্লাজায় গিয়ে দেখানোর পর তারা জানান ব্যাটারিতে সমস্যা। মাত্র দেড় হাজার টাকায় ব্যাটারি চেঞ্জ করে মুহূর্তেই সব ঠিক করে দেন। মোবাইলও এক মাস ধরে ভালো চলছে। আমি স্যামসাং টিমের কাছে জানতে চাই, তারা কেন আমাকে মিসগাইড করেছে?
কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারের মিসগাইডের বিষয়ে জানতে চাইলে স্যামসাং বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।
এদিকে উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যেই কোনো কারণ ছাড়া রিস্টার্ট নিচ্ছে গ্যালাক্সি এস ৮ ও এস ৮ প্লাস হ্যান্ডসেট। হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হওয়ার অভিযোগ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা। এক ব্যবহারকারী বলেছেন, আমি গত ১০ ঘণ্টা ধরে গ্যালাক্সি এস ৮ ব্যবহার করছি। এ সময়ের মধ্যে অন্তত সাতবার রিস্টার্ট নিয়েছে ফোনটি।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ত্রুটির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট সেভেনের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যায়। ব্যাটারিটি বহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ।
এআর/এমএআর/জেআইএম