দেশজুড়ে

নিম্নমানের সামগ্রীতে নির্মাণ হচ্ছে খুলনার সাইক্লোন শেল্টার

সিডর আর আইলায় বিপর্যস্ত খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় নির্মিত সাইক্লোন শেল্টারগুলো নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে এগুলোর স্থায়ীত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।এলাকাবাসী বলছে, যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং যে পরিমানে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে একশত বছরের স্থায়ীত্ব দেয়া এ শেল্টারগুলো নির্ধারিত মেয়াদের চার ভাগের এক ভাগও যাবে না। ইতিমধ্যে কয়েকটি শেল্টার হেলে পড়েছে বলেও দাবি করেছেন এলাকাবাসী। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এগুলো এলাকাবাসীর কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে কয়রা, দাকোপসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে। এর ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০০৯ সালে আবারও আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলার পানিতে ভেসে যায় কয়রার অধিকাংশ এলাকা। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্রায় তিন বছর লবণ পানিতে তলিয়ে থাকার পর এলাকাবাসী পানির হাত থেকে রক্ষা পায়।এলাকাবাসী জানান, সিডর আর আইলার পর যে পরিমান সাহায্য সহযোগিতা দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের জন্য এসেছে তা দিয়ে কয়রা শহর হয়ে যেতো। কিন্তু ছিটেফোটাও পায়নি অনেকেই। সর্বশেষ প্রকৃতিক দুর্যোগে জীবনহানি কমাতে ২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কয়রা এবং দাকোপ উপজেলায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ টি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেল্টারগুলো নির্মাণে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মো. খালেক এন্টারপ্রাইজ ও ঢালী কনস্ট্রাকশনকে। এলাকাবাসী জানান, দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই কাজে প্রচুর অনিয়ম করে চলেছে। তারা মরিচা ধরা রড, মাটি মেশানো বালি, ময়লা পাথরের খোয়া আর জমাট বাধা সিমেন্ট ব্যবহার করছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানান, নির্মাণ কাজে স্থানীয়ভাবে তৈরি ইট, জমাট বাধা সিমেন্ট, মরিচা ধরা রড, মাটি মেশানো বালি, ময়লা পাথরের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইট, বালি সিমেন্টের যে যে পরিমান দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করার কথা তার থেকেই অনেক বেশি পরিমানে দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে। যা এক নজর দেখলেই বোঝা যাবে। সর্বোপরি লবণ পানি পরিশোধণ করে তা দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করার কথা থাকলেও তাতো করাই হচ্ছে না।সূত্র জানায়, এক ব্যাগ সিমেন্টের সাথে দুই ব্যাগ বালি ও চার ব্যাগ পাথরের খোয়া দেয়ার কথা সিডিউলে উল্লেখ থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৪/৫ ব্যাগ বালি ও তার চেয়ে বেশি পরিমান খোয়া। যে কারণে ঢালাই করার পরপরই খোয়াগুলো বেরিয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকেই মুখোমুখি হয়েছেন হুমকির। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র আবাসিক প্রকৌশলী বাসুদেব সাহা বলেন, নির্মাণ সামগ্রী যথাযথভাবে দিয়েই নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জমাট বাধা সিমেন্ট দিয়ে কোথাও কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া এক নম্বর ইট, সিমেন্ট, বালি আর পরিস্কার খোয়া দিয়েই কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, বালি ধুয়ে ব্যবহার এবং খোয়াও পরিস্কার থাকায় তা ধোয়ার কোন কারণই নেই। তাছাড়া পানি পরিশোধন করে ব্যবহার করারও কোন বাধ্যবাধকতা নেই।এসএস/পিআর

Advertisement