বিশেষ প্রতিবেদন

‘ভিক্ষা নয়, হাওরবাসীকে ঋণ দিন’

হাওরের পানি আর মানুষের চোখের জল মিলেমিশে একাকার। অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। গোলায় ধান ভরার বিপরীতে অশ্রুতে বুক ভাসাচ্ছে হাওরবাসী। কামরুজ্জামান কামরুল, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান। শনির হাওর রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাঁধ ভাঙার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। সম্প্রতি হাওরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘নামমাত্র ত্রাণ নয়, হাওরবাসীকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন ঋণ সহায়তা।’ তার সঙ্গে কথা বলেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু।

Advertisement

জাগো নিউজ : শনির হাওরের বেড়িবাঁধ রক্ষায় জোর চেষ্টা করেছিলেন। তিন সপ্তাহ চেষ্টার পরেও বাঁধ রক্ষা করতে পারেননি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন?

কামরুজ্জামান কামরুল : তাহিরপুর উপজেলার ২৩টি হাওরের সব কয়টিই তলিয়ে গেছে। সর্বশেষ তলিয়ে যায় শনির হাওর। এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তিন সপ্তাহ চেষ্টা করেও শনির হাওর রক্ষা করতে পারিনি। এ অঞ্চলে মানুষের বেঁচে থাকার দু’টি মাধ্যম হচ্ছে ধান এবং মাছ।

একটি ফসলের উপর নির্ভর করেই আমাদের সবকিছু করতে হয়। ধান না পেলে এখানকার মানুষের আর উপায় থাকে না। ধান তলিয়ে গেল, মাছও মরে গেল। এখন আমরা একেবারেই নিঃস্ব। হতাশা এবং অভাব থেকে অনেকেই হাওর ছেড়ে যাচ্ছেন। বেঁচে থাকাই এখন হাওরবাসীর বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

জাগো নিউজ : যে বাঁধ ভেঙে শনির হাওর ডুবে গেছে, তা নিয়ে নানা কথা উঠছে…

কামরুজ্জামান কামরুল : পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদাররা মিলে এখানে লুটতরাজ করেছে। সত্যিকার কাজ করলে তো বাঁধ ভাঙার কথা নয়। তারা নামমাত্র কাজ করেন, যার পুরোটাই শুভঙ্করের ফাঁকি।

জাগো নিউজ : এর দায় তো জনপ্রতিনিধিরও। আপনারও তো তদারকি করার কথা?

কামরুজ্জামান কামরুল : তদারকি করা যায় বটে, কিন্তু কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। ঠিকাদারদের টাকা উত্তোলনের জন্য যদি জনপ্রতিনিধির সাক্ষর রাখার ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ঠিকাদাররা অনেক সতর্ক হয়ে কাজ করত।

Advertisement

আমি মাসিক সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে বারবার বলেছি। গত ছয় মাস ধরে এ ব্যাপারে আমরা বলে আসছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কান দেয়নি।

জাগো নিউজ : এই যে সর্বনাশ হলো, এখন তো প্রশাসনকে অবহিত করতে পারেন?

কামরুজ্জামান কামরুল : আমরা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে রেজুলেশন (নিবন্ধিত) আকারে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। প্রশাসনও জানে সব।

জাগো নিউজ : সরকারের সহায়তা নিয়ে কী বলবেন?

কামরুজ্জামান কামরুল : মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ৫০০ টাকা করে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। একটি পরিবারে ৩০ কেজি চালে মাস যাবে? ৫০০ টাকায় একটি পরিবারে কী হয়? দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে হাওরবাসীকে বাঁচানো যাবে না। ভিক্ষা নয়, হাওরবাসীকে ঋণ দিন। আমরা ভিক্ষা চাই না।

জাগো নিউজ : সরকার তো ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করছে?

কামরুজ্জামান কামরুল : এ নিয়ে আমরা এখনও নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা পাইনি। আমরা নিজেরাই বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাদের আহ্বান করেছি, যেন কিস্তির টাকার জন্য বাড়িতে যাওয়া না হয়।

জাগো নিউজ : হাওরবাসীর দুঃখ লাঘবে স্থায়ী কী সমাধান প্রত্যাশা করেন?

কামরুজ্জামান কামরুল : হাওরের চারদিকে নদী। নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়েছে বহু আগে। ড্রেজিং করে নদীগুলোর নাব্যতা যদি ফিরে আনা যায়, তাহলে তিনটি কাজ হবে। প্রথমত, নদীর নাব্যতা ফিরে পাবে। দ্বিতীয়ত, নদী থেকে উঠানো মাটি দিয়ে প্রশস্ত বাঁধ করলে তাতে মানুষের আশ্রয় হবে এবং সর্বশেষ এ বাঁধের কারণে হাওর রক্ষা পাবে। এটি করতে পারলেই হাওরবাসীর দুঃখ যাবে।

এএসএস/আরএস/পিআর