দেশজুড়ে

‘স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে আমি আত্মহত্যা করব’

ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে গত সাতদিন ধরে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন এক তরুণী। ওই তরুণী বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই উধাও হয়ে গেছে প্রেমিক, শ্বশুর ও শাশুড়ি।

Advertisement

জানা গেছে, ওই তরুণী নগরকান্দা পৌর এলাকার বিনয় চন্দ্র মণ্ডলের মেয়ে। তার প্রেমিক একই উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়নের মধ্য জগদিয়া গ্রামের সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সুদর্শন চন্দ্র বিশ্বাস।

এ বিষয়ে কথা হয় ওই তরুণীর সঙ্গে। তিনি জানান, স্কুলজীবন থেকে তারা একে অপরকে পছন্দ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে চম্পার পরিবার একাধিকবার বিয়ে ঠিক করলেও সুদর্শন সেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন।

এরপর ২০১৪ সালের ৯ মার্চ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা। এরপর সুদর্শন ও তিনি ফরিদপুর এবং ঢাকায় স্বামী-স্ত্রীর মতোই বসবাস করতেন।

Advertisement

তরুণী জানান, কিছুদিন আগে সুদর্শন তার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে বন্ধুদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন সুদর্শন অন্যত্র বিয়ে করেছেন। সেই খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি এসে সত্যতা পেয়ে স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন চম্পা।

এদিকে চম্পার অবস্থানের পর থেকেই পলাতক শ্বশুর সুকুমার বিশ্বাস ও শাশুড়ি রীনা বিশ্বাস। আর সুদর্শন পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকায় একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন। ঘটনার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে চম্পা বলেন, আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। অর্থের অভাবে আমাদের পরিবারের কেউ পড়াশুনা করতে পারেনি। আমি অনেক কষ্টে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। একটি সরকারি চাকরির অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু হচ্ছে না। আমি হিন্দু মেয়ে। আমাদের ধর্মমতে একবারই বিয়ে হয়। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমি আমার শ্বশুর-শাশুড়ি স্বামী নিয়ে সংসার করতে চাই। ও যদি আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দেয় তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শ্বশুরবাড়িতে তালাবদ্ধ ঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন চম্পা। আর রাতের বেলা চাচা শ্বশুর রুহি দাস বিশ্বাস তার বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন।

Advertisement

এ ব্যাপারে চম্পার নানি আশালতা মণ্ডল বলেন, এ ছেলে দুবার আমার নাতির বিয়ে ভাঙছে, ফরিদপুরে নিয়া বিয়া করছে আজ তিন বছর। এখন কয় বিয়ে করবে না, আপনারাই বলেন, একটা মেয়ের ইজ্জত, জীবন এর কি কোনো দামই নেই?

চরযোশরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটিকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করছে এবং ঘর সংসারও করছে, যার সত্যতা আমরা পেয়েছি। আমরা চেয়েছি বিষয়টি মীমাংসা করতে। কিন্তু পরিবার কিছুতেই এ মেয়ে মেনে নেয় না। তারপরও আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুদর্শন চন্দ্র বিশ্বাস ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের সবকয়টি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের নারী নেত্রী ও ব্লাস্টের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, নোটারি বিয়ে না হলেও বিয়ের ঘোষণা। ওখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোথায় কীভাবে বিয়ে হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেয়েটি ছেলেটির বৈধ স্ত্রী। আইনগতভাবে ছেলেটি মেয়েটিকে স্ত্রীর অধিকার ও ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য। তাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতেই হবে।

এস.এম. তরুন/এএম/জেআইএম