স্যামসাং ই-সেভেন হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী বজলু রহমান। গত ফেব্রুয়ারিতে তার মোবাইলের পেছনের অংশ ফুলে যায়। সাভারে স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে গেলে তারা বলেন, ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে। তবে কয়েক মাস সময় লাগবে। বজলু রহমানের তাড়া থাকায় তিনি মিরপুরের সার্ভিস সেন্টারে যান।
Advertisement
মিরপুরের সার্ভিস সেন্টারে সেট নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায়, আপাতত ব্যাটারি নেই। কয়েক দিন পরে ফোন দেন। একদিন, দুদিন; ফোন করতে করতে প্রায় দুই মাস সময় পার হয়ে যায়। সর্বশেষ ১৭ এপ্রিলও কাস্টমার কেয়ার থেকে কোনো সাড়া পাননি। তিন মাস ধরে বজলুর হ্যান্ডসেটটি বন্ধ।
বজলু রহমানের মতো এমন শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডের বাংলাদেশ শাখায়। জাগো নিউজের হাতে রয়েছে এ ধরনের অনেক অভিযোগ। যাচাই-বাছাই করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।
আবির আলীম নামে অপর এক ব্যবহারকারীর স্যামসাং জে-থ্রি মোবাইলের স্ক্রিনে (এলসিডি) সমস্যা দেখা দেয়। তিনি টাঙ্গাইলের কাস্টমার কেয়ারে যান। সার্ভিস সেন্টার দাবি করে, এটা আঘাতের মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে। ওয়ারেন্টিতে কাজ হবে না। ঠিক করতে চার হাজার টাকা লাগবে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে হ্যান্ডসেটটি ঠিক করতে সার্ভিস সেন্টারে জমা দেন তার স্ত্রী। এরপর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সামান্য একটি স্ক্রিন ঠিক করে দিতে পারেনি স্যামসাং কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
স্যামসাংয়ের পার্টস সেন্টারে ফোন দেয়া হলে তারা জানায়, এ সেটের পার্টস নাকি বিদেশ থেকে আসবে। তবে কবে আসবে; আদৌ আসবে কিনা- এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। দুই মাস পর অবশেষে ফোন হাতে পান আবির আলীম।
শুধু পার্টস দিতেই বিলম্ব নয়, স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে ফোন দিলে তাদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার না পাওয়ারও অভিযোগ করেন অনেকে।
আবির জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন সেট না পেয়ে তাদের কল সেন্টারে ফোন দেয়া হলে একজন বলেন, ‘আপনাকে কি কাস্টমার সার্ভিস থেকে ফোন দিয়ে কিছু বলা হয়েছে?’ ‘না’ উত্তর দিলে তারা ফোন কেটে দেন। এ কেমন আচরণ?
স্যামসাং বাংলাদেশের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারের ভোগান্তি নিয়ে আরও অভিযোগ করেন হোসেন মোহাম্মদ নামে আরেক ভুক্তভোগী। ডিসপ্লেজনিত সমস্যার কারণে গত ১২ মার্চ কুমিল্লা কাস্টমার কেয়ারে সেটটি দিয়ে আসেন তিনি। এখনও সেটটি ফেরত পাননি। কাস্টমার কেয়ার বলছে, ‘পার্টস আসেনি অপেক্ষা করতে হবে’।
Advertisement
এটা কি ‘স্যামসাং বাংলাদেশ’ নাকি ‘কাস্টমার কেয়ার’র অবহেলা? জানতে চান হোসেন।
বজলু রহমান জাগো নিউজকে বলেন, স্যামসাংয়ের মতো জনপ্রিয় একটি মোবাইল কোম্পানির সার্ভিস যদি এমন হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? এ বিষয়ে আমি স্যামসাংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ক্ষুব্ধ গ্রাহক আবির বলেন, এত দাম দিয়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের ফোন কিনে কি হবে? যদি তাদের রিপেয়ারিং সেন্টারের অবস্থা হয় এমন! এর চেয়ে চায়না মোবাইল-ই অনেক ভালো। দামে কম, ফিচার বেশি, সুবিধা বেশি, কাস্টমার সেন্টারের আন্তরিক ব্যবহারও মেলে। অল্প সময়ে রিপেয়ার করে দেয়।
ভোক্তাদের সঙ্গে এমন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছেন এক ক্রেতা।
অভিযোগের বিষয়ে ‘সাফাই’ জানতে চাইলে স্যামসাং বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা জাগো নিউজকে কোনো বক্তব্য দেননি। তাদের মনোনীত প্রচার সংস্থা ও মুখপাত্র কনসিটো পিআর জানায়, স্যামসাংয়ের কোনো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে প্রস্তুত হয় না। সে কারণেই কাস্টমস ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কারণে যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ আমদানি করে স্যামসাং বাংলাদেশের হাতে আসতে কিছুটা সময় লাগে। ফলে গ্রাহকদের হাতে সার্ভিস পরবর্তী হ্যান্ডসেট পৌঁছাতে কিছুটা সময়ের দরকার হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল জব্বার মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ভোক্তারা কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি প্রতারিত হন তাহলে ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ করুন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআর/এমএআর/আরআইপি