আন্তর্জাতিক

ছিটমহল সমাধানে সমর্থন দিতে সুষমার কাছে মমতার একটি শর্ত!

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ফোনে কথা হয়েছে। এসময় দুজনের মধ্যে ছিটমহল নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় মমতা ছিলেন কৃষ্ণনগরে। সকাল ৯টার দিকে সুষমার ফোন আসে মমতার কাছে।ফোনে সুষমা মমতাকে বলেন, ছিটমহল নিয়ে বিল আসছে সংসদে। আপনার সমর্থন প্রয়োজন। এসময় মমতা তাকে বলেন, সমর্থন করা যেতে পারে, তবে একটি শর্তে। তা হল ছিটমহল বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের প্যাকেজ দিতে হবে। সুষমা রাজি হন। তৃণমূলও এই বিল সমর্থন করবে বলে মমতা জানিয়ে দেন। এর আগে বেশ কয়েকবার মমতা ছিটমহল প্রসঙ্গে পুনর্বাসনের দাবি জানান। কিছুদিন আগে কোচবিহারে গিয়েও মমতা বলেছিলেন, ছিটমহল নিয়ে আমি আপনাদের পাশে আছি৷ আপনাদের যাতে পুনর্বাসনের ব্যবস্হা করা যায়, তার জন্য আমি উদ্যোগ নেব৷ কৃষ্ণনগর থেকে ফিরে মমতা যান নবান্নে৷ সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে ৭ হাজার একর এবং আমাদের ১৭ হাজার একর জমি রয়েছে৷ ৬০ হাজার মানুষ এখানে আসবেন৷ তাই তাঁদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ কেন্দ্রের কাছে চেয়েছি৷ এদিকে দু’দিন আগে লোকসভায় পেশ হয়েছে পণ্য পরিষেবা কর বিল৷ তাতেও নিঃশর্ত পূর্ণ সমর্থন দেবে তৃণমূল৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়-সংক্রান্ত স্হলসীমা চুক্তি বিলটি আসলে সংবিধান সংশোধনী বিল৷ নিয়ম অনুযায়ী এই বিল পাস করাতে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সম্মতির প্রয়োজন হবে৷ এই নিয়ে কিছুদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একপ্রস্হ আলোচনা করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ এদিন তিনি আরও একবার তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তৃণমূল সুষমাকে এই বিলে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন৷ আগামী সপ্তাহে সংসদে আসতে চলেছে পণ্য পরিষেবা কর, কালোটাকা এবং স্হলসীমা চুক্তি বিলগুলি৷ ৫ মে থেকে ৮ মে-র মধ্যে এই বিলগুলি আনবে সরকার৷ তবে বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ বিল পেশ নিয়ে এখনও সংশয় রয়েই যাচ্ছে৷ এই বিলে বিরোধীদের এককাট্টা আপত্তিতে বিল পাস করানো নিয়ে সরকার ও বি জে পি-র মধ্যেই সংশয় আছে৷বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ স্হলসীমা চুক্তি বিলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ তবে এই বিলে আসামকে বাইরে রাখা হচ্ছে৷ রাখা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও ত্রিপুরাকে৷ আসাম বি জে পি-র প্রবল আপত্তির কারণেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আসামে এগিয়ে এসেছে বিধানসভা নির্বাচন৷ বি জে পি-র আসাম শাখা এবং সমগ্র আসামবাসী ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধী৷ তাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলে আসামের যে পরিমাণ জমি বাংলাদেশে যাবে তার তুলনায় অনেক কম জমি বাংলাদেশের কাছ থেকে পাবে আসাম৷ এক্ষেত্রে একটি রাজ্যকে বাদ রেখে বাকি তিন রাজ্যে এই চুক্তি কীভাবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে জলঘোলা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন সংসদীয় বিষয়ক দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি৷ তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের আলোচ্যসূচিতে স্হলসীমা চুক্তি বিলটি রাখা হয়েছে৷ কিন্তু, গতকাল সন্ধ্যায় লোকসভার সর্বদলীয় কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়েছে৷ সেখানে এই বিল নিয়ে কোনওরকম আলোচনা না করে আচমকা আগামী সপ্তাহের আলোচ্যসূচিতে এই বিলের উল্লেখ করায় কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তীব্র প্রতিবাদ জানান৷ দীর্ঘক্ষণ বাদানুবাদ চলে রাজীবপ্রতাপের সঙ্গে৷ সভার কার্যোপদেষ্টা কমিটিকে সরকারের উপেক্ষা করার প্রবণতার নিন্দা করেন সি পি এম সাংসদ মহম্মদ সেলিম৷ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং বি জে ডি সাংসদ তথাগত শতপতিও বিল পেশের পদ্ধতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন৷ সৌগত রায় তো রীতিমতো সংসদের নিয়মাবলীর বই খুলে স্পিকারকে বি এ সি সম্পর্কে বলেন৷ কিন্তু, সৌগত রায় যা-ই বলুন না কেন এক্ষেত্রে তার দলের অবস্হান ঠিক উল্টো৷ তৃণমূল কংগ্রেস স্হলসীমা চুক্তি বিলের পক্ষে৷ দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, মমতা ব্যানার্জি কথা দিলে কথা রাখেন৷ তিনি ওই এলাকার মানুষকে কথা দিয়েছেন৷ সেই কারণেই ভারত-বাংলাদেশ স্হলসীমা চুক্তি বিলটি তাঁরা সমর্থন করবেন৷ মোদি সরকার রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করেই বিলটি এনেছে৷ এবং রাজ্যের দাবি মেনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্যাকেজ দিতে রাজি হয়েছে৷ তিনি বলেন, আগেই এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কথা হয়েছিল৷ এদিন আরও একবার সুষমা স্বরাজ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন৷ আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার পুনর্বাসন প্যাকেজ দিতে সম্মত হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, বিলটি পেশ করার সময় এই বিলে মূলত কী কী আছে এবং ওই এলাকার মানুষের পুনর্বাসনের কী প্রস্তাব আছে সেটা সংসদে জানানো হবে৷ সম্ভবত ৫ মে বা তার পর বিলটি পেশ করবে সরকার। সূত্র-আজকাল।এমএএস/পিআর

Advertisement