বাংলা, বাঙ্গালি কিংবা বাংলাদেশ। তিনটি নামের সাথে প্রতিষ্ঠানটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙ্গালি জাতি সত্তার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে শিক্ষালয়টি। ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন, ৯৬-তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সবশেষ ১/১১ এর তত্তাবধায়ক সরকারের পতনসহ বাঙ্গালি জাতির সকল আন্দোলন সংগ্রামের মূল নেতৃত্বে ছিল ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপিঠটি। জাতির ক্রান্তিকালেও ছিল তাদের অগ্রণী ভূমিকা। এখনো বিশ্বের দরবারে বাংলা, বাঙালি কিংবা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে বদ্ধ পরিকর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।হ্যাঁ, বলছিলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। প্রচ্যের অক্সফোর্ড নামটিও তাদের অর্জিত। একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এককভাবে এমন আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে এমন শিক্ষালয় পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এককভাবে শীর্ষে আছে তারা। একই সাথে দেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে সামাজিক- সাংস্কৃতিক সব ধরনের আন্দোলনে তার ভূমিকা শুধু অগ্রগামীই নয়, এমন নজির নেই বিশ্বের অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের। জাতির উত্থান-পতন থেকে শুরু করে সব সময়ই ছিল তাদের অবদান। জাতির জয় পরাজয়ের সাক্ষ্য হিসেবে এখানে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য শিল্পকর্ম। আর সেগুলোর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহু দিনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে কাঙ্খিত সেই তোরণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৩ বছর পর উন্মোচিত হতে যাওয়া প্রথম গেইটটির নামই যখন হয় ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’ তাখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির কোন অর্জনই এর স্পর্শ ছাড়া হতে পারে না।জানা গেছে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে এর অভ্যন্তরে ৬টি গেইট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (ডিইউএএ)। যার মধ্যে ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’ নামক প্রথম গেইটটি নির্মিত হয়েছে নীলক্ষেত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে। আর এটি নির্মানে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য, ১৩ ফুট প্রস্থ ও প্রায় ৩৭ ফুট উচ্চতার এ তোরনের কাজ শেষ । এখন শুধু বাকি লাইটিংয়ের কিছু কাজ। তাও শেষ প্রান্তে। রাতের বেলায় দেখে মনে হবে নিশ্চয় এটি মোঘল কিংবা ইংরেজ আমলে নির্মিত কোন ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম।তোরনটি নির্মানের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৬ই মে। গত বছরের বিজয় দিবসে তোরনটি উন্মোচনের ঘোষনা দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নির্মাণ পথে যানজট জনিত কারণে কাজ শেষ করতে না পারায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পরবর্তীতে একই কারণে স্বাধীনতা দিবসে তোরনটি উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রাকিব বলেন, ‘আমদের বহু দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণ নির্মিত হয়েছে। আমাদের সময়ে এই গেইটটি নির্মিত হওয়ায় আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। এছাড়া কর্তৃপক্ষ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে অবদান রেখেছে সে কথা মাথায় রেখেই এই তোরণটির নাম ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’ রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ তোরনটি উদ্বোধন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (ডিইউএএ) এর সভাপতি কাজী রকীব উদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তোরনটি উদ্বোধন করবেন। তাই আমরা ইতোমধ্যে তাঁকে চিঠি দিয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম এপ্রিলে তোরনটি উন্মোচন করতে। কিন্তু তিনি আমাদের সময় দিতে না পারায় তা সম্ভব হয়নি। আশা করি মে মাসের মধ্যে আমরা তোরণটি উন্মোচন করতে পারবো। তা না হলে আগামী পহেলা জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের দিন এটি উন্মোচন করা হবে।তোরণটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সবসময়ই সাহসী ভূমিকা রেখেছে। তাই আমরা আমাদের গর্বের জায়গা থেকে এর নাম ‘মুক্তি ও গনতন্ত্র তোরণ’ রেখেছি।’তোরণটি উদ্বোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, এর নির্মণ কাজ প্রায় শেষ। বাকী কাজগুলো শেষ হলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে এটি উদ্বোধন করব। সে ক্ষেত্রে চলতি মাসেই এটি উদ্বোধন হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।এমএইচ/এআরএস/পিআর
Advertisement