ভারতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে রক্তদানের প্রবণতা কমছে। সম্প্রতি রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
Advertisement
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে অনূর্ধ্ব পঁচিশের একটি বড় অংশের মধ্যে রক্তদানের ইচ্ছে কমেছে। ২০১৬-১৭ সালে বিভিন্ন জেলার ৫শ রক্তদান কেন্দ্রে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ৬০ শতাংশ রক্তদাতার বয়স পঞ্চাশের উপরে। কেন্দ্রগুলোতে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী রক্তদাতার সংখ্যা মাত্র ২৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরে কলকাতাতেই রক্ত লাগে প্রায় ১০ লাখ ইউনিট। তার মধ্যে ৭ লাখ ইউনিট রক্তের জোগান দেয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই কাজে এগিয়ে না আসায় সমস্যায় পড়ছে ব্লাড ব্যাংকগুলো। কারণ শারীরিক সমস্যার ফলে রক্তদানে সমস্যা হয় প্রবীণ নাগরিকদের। শরীরে বিভিন্ন রোগ থাকলে তাদের রক্ত কাজে লাগে না। নতুন প্রজন্মের সেসব সমস্যা অনেক কম থাকে। তবুও তারা রক্তদানে আগ্রহী না।
রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই বক্তব্য, গরমকালে রক্তদান শিবির কম হয় এবং সেখানে রক্তদাতার সংখ্যাও থাকে কম। তার জেরেই গরমে রক্তের সঙ্কটে ভোগে অধিকাংশ ব্লাড ব্যাংক। কিন্তু নতুন প্রজন্ম রক্তদানে এগিয়ে না এলে রক্তের ঘাটতি থাকবে সারাবছর। ফলে রোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
Advertisement
তার ওপর ব্লাড ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে গত পাঁচ বছরে ২৮ লাখ ইউনিট রক্ত ও রক্তের অন্যান্য উপাদান নষ্ট হয়ে গেছে।
ভারতের বর্তমান জনগোষ্ঠী ১.২ বিলিয়ন। প্রতিবছর দেশটিতে ১২ মিলিয়ন ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। চাহিদার বিপরীতে দেশটিতে সংগ্রহ করা যায় মাত্র নয় মিলিয়ন ইউনিট রক্ত। আরও তিন মিলিয়ন ইউনিট রক্তের অভাব থেকেই যায়। ফলে মারাত্মক রক্ত সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ জানান, নতুন প্রজন্মকে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই স্বাস্থ্য দফতরের। রক্তদানে তাদের এগিয়ে না আসার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ।
নতুন প্রজন্ম যে রক্তদানে উৎসাহী হচ্ছে না সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্টুডেন্ট হেলথ হোমের সাধারণ সম্পাদক, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায়ও। তিনি বলেন, ‘শুধু শিবিরের আয়োজন নয়, রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর কর্মসূচিও বাড়াতে হবে। আমরাও সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি।’
Advertisement
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, পারিবারিকভাবে সন্তানকে এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান না দেওয়ার কারণে তারা রক্ত দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে না। ছোটোবেলা থেকেই সন্তানকে জীবের প্রতি ভালবাসা, পরোপকারী হওয়ার উৎসাহ প্রদানের কথাও বলেন তারা।
কেএ/টিটিএন/আরআইপি