দেশজুড়ে

জীবননগরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে ভারতে

স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর, মেদেনীপুর, বেনীপুর ও হরিহরনগর সীমান্ত পয়েন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ১ বছর ধরে এলাকার ৩টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এ রুটগুলো দিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি স্বর্ণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করছে। এসব স্বর্ণ পাচারকারী সিন্ডিকেড প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ প্রতিদিন চোরাইপথে ভারতে পাচার করছে। প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ভারতে স্বর্ণ পাচার অব্যাহত রাখলেও স্বর্ণ পাচার বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসনের দূর্বল অভিযানের কারণে মাঝে মধ্যে দুই-একজন বহনকারী ধরা পড়লেও মূলহোতারা বরাবরই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত গডফাদারদের শনাক্ত করতে শতভাগ ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে সোনা চোরাচালানের কমিশনের টাকার একটি বড় অংশ যায় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। জীবননগরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ গত ১০ মার্চ ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জেআর পরিবহন বাস কোটচাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি করে জসিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে ৮৪ ভরি সোনাসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার জসিম উদ্দীন পুলিশের কাছে জানায়, সে স্বর্ণগুলো ঢাকা থেকে জীবননগর রুট দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল। এর আগে গত ৪ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ‘জেআর পরিবহনের’ একটি বাস কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ তল্লাশি করে জীবননগরের চি‎হ্নিত স্বর্ণ চোরাচালানি উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা পাড়ার অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য ওবায়দুল্লা ও সুনিল কর্মকারকে ১ কেজি ১৫০ গ্রাম স্বর্ণের বার ও চেইনসহ আটক করে। তার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার উথলী গ্রামের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য এনামুল, সেকেন্দার ও আজিবর ৩০টি স্বর্ণের বারসহ ঢাকা গাবতলীতে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়। তার আগে জীবননগর সীমান্তের বিপরীতে ভারতের মাঝদিয়ায় বিএসএফের হাতে ৩ কেজি স্বর্ণসহ উপজেলার হরিরহনগর গ্রামের আব্দুল্লা আটক হয়। বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা স্বর্ণের বার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকজন কমিশনের বিনিময়ে বিমানবন্দর পার করে দেয়। এর পর দশ তোলা ওজনের প্রতিটি স্বর্ণের বারের জন্য দুই হাজার টাকা কমিশন নিয়ে উপজেলার স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনযোগে জীবননগরে নিয়ে আসে। পরে সময় সুযোগ বুঝে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণের বারগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, জীবননগর উপজেলার কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ওইসব অবৈধ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ইতোমধ্যে এ অবৈধ ব্যবসা করে অনেকেই অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির জাগো নিউজকে জানান, স্বর্ণ চোরাচালানে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এমএএস/পিআর

Advertisement