কেউ এখন হঠাৎ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকলে চমকে উঠবেন। শুধু মাঠের মাঝখানটায়, যেখানে এক সঙ্গে ছয়টি উইকেট- সেই জায়গাটুকুই কেবল সবুজ। আর এক ইঞ্চি জায়গাও সবুজ নাই। ঘাষের ‘ঘ’ ও নেই সেখানে।
Advertisement
পুরো মাঠ ন্যাড়া। ওপরের ছয় ইঞ্চির স্তরের পুরোটা ফেলে দেয়া হয়েছে। পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক রেখে মাঠের ওপরের বালু ও মাটি ফেলে নতুন করে বালুর স্তরের ওপর মাটি দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টিতে খানিক বিঘ্ন ঘটছে কাজের। তারপরও হোম অব ক্রিকেটের আউটফিল্ড পরিচর্যা ও নতুনভাবে তৈরির কাজ চলছে জোরেসোরে।
চিফ কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা জানিয়েছিলেন, ‘আশা করছি আগস্টের মধ্যে মাঠের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পাকিস্তানের সাথে খেলা উপযোগি হবে না। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজে খেলা হবে।’
এত গেল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের অবস্থা। আজ ও কাল ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে আউটার স্টেডিয়ামে গেলে যে আঁতকে উঠতে আপনাকে! চোখ কপালে তুলে বলে উঠবেন, এ কি অবস্থা মাঠের? এই আউটার স্টেডিয়ামেই গত মৌসুম পর্যন্ত খেলা হয়েছে প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের খেলা। এছাড়া নারায়নগঞ্জের স্থানীয় ক্রিকেটের খেলাগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো সেখানে।
Advertisement
কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত আউটার স্টেডিয়ামের পুরোটা এখন পানির নিচে। সে কি আশে পাশে তো নদী বা খাল নেই! বন্যাও হয়নি। তাহলে পানি আসলো কোত্থেকে? বন্যার পানিতো নয়ই। গত কদিনের বৃষ্টির পানিও নয়।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি আউটার স্টেডিয়ামের পুরো মাঠ ভরে গেছে ময়লা পানিতে। আশপাশের যত ম্যানহোল ও সুয়ারেজের পানি এসে জমেছে ফতুল্লা আউটার স্টেডিয়ামে।
শুরু থেকেই এ ফতুল্লা স্টেডিয়াম ও তার প্রবেশ পথের আউটার স্টেডিয়ামে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল নয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি থাকায় নির্মাণের কয়েক বছর পর্যন্ত এক সময় ভারি বৃষ্টি হলে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে পানি জমে যেত।
একবার পুরো বর্ষায় পানির নিচে ঢাকা ছিল পুরো মাঠ। পরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করা হয়েছে। এখন আর মূল মাঠে পানি জমে না। ভারী বর্ষণেও না; কিন্তু আউটার স্টেডিয়ামের এ কি অবস্থা?
Advertisement
ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা ও দর্শক- সবার মূল গেট পার হয়ে মাঠে ঢুকতে গিয়ে যে বিড়ম্বনা! উৎকট গন্ধ। এক থেকে দেড়ফুট ময়লা পানিতে পুরো আউটার স্টেডিয়াম সয়লাব। বৃষ্টির পানি হলে তবু একটা কথা ছিল; কিন্তু ম্যানহোল আর সুয়ারেজের পানি হওয়াতেই বিড়ম্বনা বেশি।
এ পানি ঠেলে পার হওয়াও দায়। রিকশা, সিএনজি কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি- সব যানবাহনেই ময়লা পানি ঢুকে যাওয়ার জোগাড়।সবাই মাঠে ঢুকছেন নাক-মুখ রুমাল চেপে। বেরও হচ্ছেন নিঃশ্বাস বন্ধ করে।
জানা গেছে, এ পানি নিষ্কাষনের কোনো উপায় নেই। প্রখর রোদ ছাড়া এ পানি দু’একদিনে শুকানোর কোন সম্ভাবনাও নেই। প্রশ্ন উঠেছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে এ আউটার স্টেডিয়াম নির্মাণ করে তাহলে লাভ কি হলো?
এই আউটার স্টেডিয়ামে আশষ পাশের সুয়ারেজের পানি ঢোকে কি করে? নির্মাণের সময় কি তা খুঁটিয়ে দেখা হয়নি? যারা এ মাঠের নির্মাতা তাদের যোগ্যতা ও কার্যদক্ষতা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই এটাকে জাতীয় অর্থ অপচয় বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে পানি শুকিয়ে গেলেও আরও একটি ঝক্কি থেকেই যাবে। যেহেতু ময়লা ও নোংরা আবর্জনা এবং সুয়ারেজ পানি- এ পানি নিস্কাশনের পর মাঠের ঘাষ যাবে মরে। তাতে করে আবার নতুন ঘাস লাগানোর কাজ করতে হবে। আবার টেন্ডার । আবার অর্থ ব্যয়। কারো কারো পকেট ভারী হবে; কিন্তু কাজের নামে লবোডঙ্কা। এভাবে দেশ ও সরকারের অর্থ অপচয় আর কতকাল?
এআরবি/আইএইচএস/বিএ