অর্থনীতি

ভারত থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার

ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিতব্য বেসরকারি কোম্পানি আদানি পাওয়ার লিমিটেড থেকে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা কয়লাভিত্তিক দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড’-এর ট্যারিফ মূল্য থেকে ২৯ পয়সা বেশি। আদানি পাওয়ার লিমিটেড থেকে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে মোট এক লাখ ৯০ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

Advertisement

বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবটি সভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬১ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় ৬ টাকা ৮৯ পয়সা। আর আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ২৫ বছরে সরকারের মোট ব্যয় হবে আনুমানিক এক লাখ ৯০ হাজার ৯৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড’-এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’।

Advertisement

এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে আদানি পাওয়ার গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি সমন্বিত কারিগরি ও বাণিজ্যিক প্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবটি বিভিন্ন কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই এবং আদানি পাওয়ারের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের পর বিদ্যুৎ বিভাগ এটি অনুমোদন দিয়েছে।

চীনা কোম্পানির সহায়তায় নির্মিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট’-এর চেয়ে আদানি পাওয়ারের ট্যারিফ হার বেশি হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এ বিষয়ে আদানি পাওয়ারের বক্তব্য হচ্ছে, কয়েকটি অতিরিক্ত আইটেমে তাদের বাড়তি ব্যয় হবে, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর মধ্যে রয়েছে ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, কর্পোরেট ট্যাক্স ও অক্সিলিয়ারি কনজাম্পশনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি। আদানি পাওয়ারের প্রাথমিক প্রস্তাবে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ৭ টাকা ৫৩ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা কমিয়ে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকার, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনাপত্তিপত্র সংগ্রহের দায়িত্বও আদানি পাওয়ারের। ইতোমধ্যেই ভারত সরকার প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শর্তসাপেক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ আরও জানায়, পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সে দেশের কোনো আইনগত পরিবর্তন বা রাজনৈতিক ঘটনার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে যাতে বাড়তি ব্যয় বহন করতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা দিতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কর ও শুল্ক ছাড় দেয়ার জন্য ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বাবিউবি।

Advertisement

বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশের সীমানা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বগুড়া পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কথা রয়েছে বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে হিসাবে আগামী ২০২১ সালে দেশে দৈনিক ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।

এমইউএইচ/জেএইচ/এএইচ/এমএস