খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দেবেন সাব্বির!

ক্যারিয়ারের বড় সময় ব্যাট করেছেন মিডল ও লেট অর্ডারে; ছয় কিংবা সাত নম্বরে। তাই ৩৫ ম্যাচের সব কটায় ব্যাট করার সুযোগও মেলেনি। ৩০ বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান রুম্মনের হাফ সেঞ্চুরি চারটি।

Advertisement

কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বাকি ২৬ ইনিংসে ছয় ছয়বার চল্লিশের (৪৪*+৪২*+৪০+৪১+৪৩+৪৯) ঘরে পা রেখেছেন রাজশাহীর ২৫ বছর বয়সী সাহসি এই উইলোবাজ।

মোট খেলা ইনিংসের তিন ভাগের এক ভাগ ইনিংসই চল্লিশের ঘরে স্কোর। তার মানে পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ব্যাট হাতে নামলেই রান করতে পারেন সাব্বির। শুধু রান করাই নয়। সাব্বির আরও একটা কাজ খুব ভাল পারেন; তাহলো শটস খেলা।

উইকেটের চারিদিকে বাহারি স্ট্রোক খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে এ সাহসী যুবার। এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সেরা স্ট্রোক মেকারের তালিকা করতে গেলে খুব ওপরের দিকেই আসবে তার নাম। হাত খুলে খেলাতেও তার জুড়ি মেলা ভার। ওয়ানডে (৯৫.১৭) আর টি-টোয়েন্টির (১২০.৭৭) স্ট্রাইক রেট সে সাক্ষীই দিচ্ছে।

Advertisement

যাকে যেখান দিয়ে খুশি, সেখান দিয়ে শটস খেলতে পারেন স্বচ্ছন্দে, অবলীলায়; কিন্তু একটা অপূর্ণতা রয়েই গেছে। এখনো শতরানের দেখা মেলেনি তার ক্যারিয়ারে। অতিবড় সাব্বির সমর্থকও মানছেন, অনেক গুণের মাঝে একটাই ঘাটতি। লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন কম।

পরিসংখ্যানও তাই জানান দিচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে ৮০ রানের ইনিংস থাকলেও ওয়ানডেতে সর্বাধিক স্কোর মোটে ৬৫। সেটা গত বছর অক্টোবরে হোম অব ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এবার শ্রীলঙ্কায় শেষ ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে আসলেও ডাম্বুলায় প্রথম ম্যাচে ৩২৪ রানের বড়সড় টিম স্কোরেও মোটামুটি ভালই (৫৬ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৫৪) অবদান রেখেছিলেন।

এবার আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্ট আর ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেমন করবেন সাব্বির? ক্যারিয়ারে প্রথম বার আইরিশ ও ইংলিশ কন্ডিশনে খেলতে যাবার আগে তার নিজের চিন্তা-ভাবনা বা লক্ষ্য পরিকল্পনাই বা কি? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না।

তাহলে সাব্বিরের মুখ থেকেই শুনুন। অনেক নামী ক্রিকেটারের মত রাজশাহীর এ প্রাণোচ্ছল যুবাও খানিক সংস্কার মানেন। তাই সে অর্থে কোন টার্গেট বা গোল সেট করতে চান না। এ প্রসঙ্গে তার কথা, ‘আমি আসলে টার্গেট সেট করে এগুতে চাই না। আমার ক্যারিয়ারে কখনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে আগাতে পারিনি।’

Advertisement

ক্লাব ক্রিকেটের উদাহরণ টেনে এনে সাব্বির বলেন, ‘এর আগে বেশ কয়েকবার ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও জাতীয় লিগ শুরুর আগে খুব সিরিয়াস থেকে বড় সড় টার্গেট সেট করেছিলাম। একবার এক হাজার রানের লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় লিগ খেলতে নেমে চরম ব্যর্থ হই। সাকুল্যে মনে হয় সাড়ে তিনশোর মত রান করেছি। এছাড়া জাতীয় লিগ, বিসিএল আর প্রিমিয়ার লিগে যতবারই টার্গেট সেট করে খেলতে নেমেছি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছি।’

এ কারণে জাতীয় দলেরও হয়েও কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চান না সাব্বির। তিনি বলেন, ‘আমি কোন সিরিজ, টুর্নামেন্ট বা মিশনে সে অর্থে আর লক্ষ্য নির্ধারন করে মাঠে নামতে চাই না। আমি লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুতে চাইলে পারি না। কাছাকাছিও যেতে পারি না। টেনসন হয়। স্বাভাবিক খেলাটা নষ্ঠ হয়।’

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তাই সাব্বিরের সামনে তেমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করা নেই। তিনি বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও আমার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। নিজেকে ভাল খেলার জন্য তৈরি করছি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনেক বড় মঞ্চ। সারা ক্রিকেট বিশ্বের চোখ থাকবে এ আসরের দিকে। সেখানে ভাল খেলতে পারলে অবশ্যই সবার নজরে আসা যাবে। এটা জানি এবং বুঝিও।’

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে এরপরই দার্শনিক হয়ে উঠলেন সাব্বির। তিনি বলেন, ‘এটা এমন এক মঞ্চ যেখানে একজন খেলোয়াড় ওপরেও উঠতে পারে। আবার নীচেও নামতে পারে। আসরের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি সচেতন; কিন্তু ওই যে বললাম। আমি টার্গেট সেট করে আগাতে চাইলে পারি না। তাই পুরো আসরে কোন লক্ষ্য নির্ধারণ না করে ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলবো। নিজের আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখতে চাই।’

সাব্বির যতই পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন না কেন, বড় মঞ্চে একটা বড় ইনিংস জরুরী হয়ে পড়েছে তার। জাগো নিউজের সাথে আজ দুপুর ও বিকেলে একান্ত আলাপে তা স্বীকারও কওে নিয়েছেন তিনি। ভক্ত ও অনুরাগিদের বড় অংশ তার কাছে সেঞ্চুরি প্রত্যাশা করছেন। তা মর্মে মর্মে অনুভব করা সাব্বিরের উক্তি, ‘হ্যাঁ বিশ্বাস করেন, এই সেঞ্চুরির কথা আমাকে অনেক সুহৃদ শুভানুধ্যায়িই বলছেন। সেঞ্চুরির আশা করা যায়। তবে সেটাতো আর বলে কয়ে আসে না। করাও যায় না। আমি নিজের মত করে খেলতে চাই। ইনশাল্লাহ আমার চেষ্টা থাকবে।’

তবে তার শেষ বক্তব্যটিই বলে দেয়, ভিতরে ভিতরে সাব্বিরও শতরানের স্বপ্নই দেখছেন; কিন্তু ওই যে কথায় বলে না, ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।’

কয়েকবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে খেলতে নেমে না পারাটা তাই এখনো ভাবায় সাব্বিরকে। কে জানে এবার সেই মনের ও স্নায়ুর দুর্বলতা কেটে যেতেও পারে। আর যদি যায়ও, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই প্রথম শতরানের দেখা মিলতে পারে সাব্বিরের।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি