উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় আছে দক্ষিণ কোরিয়া। পিয়ংইয়ং নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে বলে কোরীয় দ্বীপে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
Advertisement
দক্ষিণ কোরিয়ার একীভূতকরণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি ডুক হায়েং জানিয়েছেন, মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া তাদের সেনা বাহিনী কোরিয়ান পিপলস আর্মির ৮৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করবে। এই অনুষ্ঠানে শীতকালীন অনুশীলন অন্তর্ভূক্ত করবে দেশটি। একই সময়ে যৌথ সামরিক মহড়া চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া। তাদের এই মহড়া চলতি মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলবে।
লি জানান, বড় ধরনের সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার কারণে কোরীয় দ্বীপে শক্ত ও কৌশলগত অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা খুব কাছ থেকেই সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছি। দক্ষিণ কোরিয়া কখনো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না।’
Advertisement
শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোরীয় দ্বীপের পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। উত্তর কোরিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং এখানে বেঁচে থাকার অধিকারে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছর দুটি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তারপর থেকেই কোরীয় দ্বীপে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকানোর প্রতিজ্ঞা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হুয়াং কিয়ো আহন শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, যে কোনো সময় নতুন করে উস্কানিমূলক কাজ করতে পারে উত্তর কোরিয়া।
৩৮ নর্থ স্যাটেলাইটে তোলা উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু ছবি সংগ্রহের পর মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক পরীক্ষার স্থানে তারা অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড দেখেছেন। তবে এসব ছবি ঘিরে এ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পুঙ্গি-রি পারমাণবিক পরীক্ষার স্থানে আসলেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
Advertisement
তবে পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে নির্দেশ পেলে যে কোনো সময়ই ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে পুঙ্গি-রির।
এদিকে, উত্তর কোরিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর এক সেনা মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রুটিন মাফিক সেনা মহড়ার অংশ হিসেবে অনুশীলন করেছেন সেনারা।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলে আসছে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে খুব শিগগিরই আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে উত্তর কোরিয়া।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং ক্যানবেরাকে সতর্ক করে বলেছে, তারা যদি অন্ধভাবে এবং প্রবল আগ্রহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুস্মরণ করে তবে দেশটিতে পারমাণবিক হামলা চালানো হবে।
এদিকে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন রণতরীর বহরের সঙ্গে জাপানের নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়ায় রোববার উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়ে বলেছে, পিয়ংইয়ং তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে হামলা চালিয়ে মার্কিন রণতরী ডুবিয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই ভঙ্গুর হতে শুরু করেছে। বিরোধীতা করলে বা দেশটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করলেই তাদের শত্রু ভাবছে উত্তর কোরিয়া। তাছাড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বার বার ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে কোরীয় দ্বীপে অস্থিরতা তৈরি করছে তারা।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের শীর্ষ রাষ্ট্রদূতরা মঙ্গলবার সাক্ষাত করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত করেছেন, এই সাক্ষাতের পেছনে মূল উদ্দেশ্য উত্তর কোরিয়ার ওপর চরম চাপ তৈরি এবং চীনের গঠনমূলক অবস্থান নিশ্চিত করা।
এদিকে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে তাদের সেনা বাহিনী স্বাভাবিক অনুশীলন করছে।
টিটিএন/জেআই্এম