জাতীয়

শিল্প দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় পরিকল্পনা জরুরি

দীর্ঘদিন থেকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের গঠিত কমিটির সুপারিশ ‘আইনি সুরাহা’ না হওয়ায় বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।এ অবস্থায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য সব শিল্প কলকারখানায় কর্মরত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে বিকল্প ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত সাভার দুর্ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায্য অধিকার ও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। এই বাস্তবতায় শিল্প দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত স্বজনদের সুষ্ঠু ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার তাগিদে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রয়োজন। এ নীতিমালা প্রণয়নে করণীয় ও সুপারিশমালা তুলে ধরতে ব্র্যাক  এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।  ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন ড. আহমেদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খন্দকার মোস্তান হোসেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের  যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আনোয়ার উল্লাহ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন।সভা সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক গওহার নঈম ওয়ারা। শিল্প দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ নিয়ে মূল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও রানা প্লাজা ক্লেইমস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সিনিয়র ক্লেইমস পর্যবেক্ষক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার।  অধ্যাপক এম এম আকাশ তাঁর উপস্থাপনায় ‘রানা প্লাজা ’দুর্ঘটনাকে ‘মানবসৃষ্ট’ দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য যে মানদণ্ড নির্ধারণ করে সুপারিশ করেছিলাম তা  মনে হচ্ছে ‘পাস’ করানো কঠিন হবে। কারণ একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপে সরকার শেষ পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন করতে পারে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। খন্দকার মোস্তান হোসেন বলেন, ‘রানা প্লাজা’ দুর্ঘটনা শুধু গার্মেন্টস রফতানির প্রশ্ন নয়, বরং আমাদের ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত। দেশে আইন ও নীতিমালা আছে কিন্তু এর বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ কম। সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যমান শ্রম আইন, ২০০৬ এর কিছুটা সংস্কার করে আরও উন্নত করেছে। বর্তমানে সরকার এই আইন কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর জন্য সরকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ করার জন্য এর লোকবল বৃদ্ধি করেছে।তিনি বলেন, বর্তমান আইনে কারখানার সিঁড়ি, শ্রমিকদের কর্মস্থলের পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি কি হবে তা স্পষ্ট করা আছে। তবে আইনে যা বলাই থাকুক না কেন ‘মান্য করাটাই’ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা যাতে সবাই মেনে চলে সেজন্য আমরা সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।  ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাস্তবায়নে মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।  ড. আহমেদ মোশতাক রাজা চৌধুরী শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সাভার দুর্ঘটনায় পঙ্গু ও আহতদের জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্র্যাক যে সহযোগিতা করে আসছে আশা করছি আগামী দিনে আমরা তা অব্যাহত রাখতে পারব। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে সংঘটিত বহুল আলোচিত আট তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে এক হাজার ১৩৪ জন নিহত ও দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হয়।  সভায় জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর পঙ্গু ও আহতদের সহায়তায় ব্র্যাক এ পর্যন্ত গুরুতর আহত ১৬০ জনকে মেডিকেল সহায়তা, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ৭৪৩ জনকে মনোসামাজিক সহায়তা, হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হওয়া ১৯ জনকে কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা ও ফিজিওথেরোপি প্রদান,  ৮৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে জীবিকার সহায়তা হিসেবে উৎসাহমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা আর্থিক সমস্যায় আছেন তাদের ৩৩০ জনকে মাসিক সঞ্চয় তহবিল দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৩৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নগদ ৬৫ হাজার টাকা এবং ১৯৪ জনকে এক লাখ টাকা ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে দেয়া হয়।এমএ/এসআর

Advertisement