মতামত

হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ান

হাওর অঞ্চলের মানুষজনকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা এককথায় অবর্ণনীয়। অকাল বন্যায় ফসল গেছে। ধান পচে সৃষ্ট গ্যাসে ৫০ মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে। গৃহপালিত পশু-হাঁস মুরগি নিয়েও পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। মরা মাছ খেয়ে হাঁস মারা যাচ্ছে। বিষাক্ত গ্যাস, জীব-জন্তুর মরা-পঁচা গন্ধে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে। সর্বস্ব হারিয়ে মানুষজন এখন নিঃস্ব। অনেকের ঘরে চুলাও জ্বলছে না। এ অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হাওর অঞ্চল কে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব হচ্ছে হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ানো।দুর্যোগ মোকাবেলায়ও নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ।

Advertisement

চলতি মৌসুমে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ও কোথাও কোথাও বাঁধ না হওয়ায় একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর হাওর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ বোরো চাষি সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। বলা যায় হাওরবাসীর দুঃখ যেন ললাট লিখন। নইলে প্রায় প্রতিবছর অকাল বন্যায় কেন ভেসে যাবে তাদের স্বপ্নের ফসল। বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি বরাদ্দ আছে। বাঁধও নির্মাণ হয় নিয়ম করে কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। মার্চ এপ্রিলের বর্ষণে ভেসে যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল। ফলে হাওরের কান্না থামে না। এ অবস্থার অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

দুঃখজনক হচ্ছে বছরের পর পর হাওরের ফসল নিয়ে এমন উদ্বেগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছেন না সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিষয়টি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের দৃষ্টি দেওয়ার দাবি কৃষকদের। ঢাকায় অধ্যয়নরত হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা হাওরের দুরবস্থা নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। সেখানে তারা অভিযোগ করে বলেছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে অর্থ বরাদ্দ থাকার পরও সঠিক ব্যবহারের অভাবে প্রতিবছরেই অকাল বন্যায় ফসল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে হাওরবাসীকে। তাই অকাল বন্যায় আক্রান্ত হাওরবাসীর দাবি এখন পুনর্বাসনের নামে ভিক্ষার বদলে বন্যা রক্ষা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান করা।

সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণার মতো হাওর বেষ্টিত জনপদ বরাবরই অবহেলিত। কিন্তু দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ অঞ্চলের জেলাগুলোর রয়েছে বড় ভূমিকা। ঊর্বর মাটিতে পর্যাপ্ত ধানের পাশাপাশি জলাধারগুলো মৎস্য সম্পদের আধার। ঢাকা শহরে আসা মোট মাছের এক-তৃতীয়াংশই আসে এ জনপদটি থেকে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সুরক্ষার জন্য প্রতিবছর জেলাগুলোতে সরকার শতকোটি টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এ বছর শুধু সুনামগঞ্জ জেলার জন্য বরাদ্দ ৬৭ কোটি টাকা। তারপরও হঠাৎ বন্যায় সব ফসলি জমি পানির নিচে চলে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এত টাকার বাঁধ গেল কই?

Advertisement

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে হাওর অঞ্চলে বছরে মাত্র একবারই ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়। বৈশাখের শেষের দিকে কৃষক ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই অকাল বন্যার কারণে কৃষকদের সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অথবা নিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

অকাল বন্যায় ফসল তুলতে না পারার কারণে হাওর অঞ্চলের মানুষজনের জীবন জীবিকাই শুধু নয় এর একটি সামগ্রিক প্রভাব পড়বে দেশের খাদ্য উৎপাদনেও। মরে গেছে মাছও। যার প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী এবং ব্যাপক। সরকার যুগোপযোগী নীতি গ্রহণ করে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করেছে। হাওরবাসীর দুঃখ দূর করতেও সে রকম যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর

Advertisement