খেলাধুলা

টিকে থাকতে আজ জিততেই হবে মেসিদের

ফুটবলে অনেক দ্বৈরথ আছে। তবে অন্য সব দ্বৈরথের সঙ্গে এল ক্ল্যাসিকোকে মেলালে চলবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে লড়াই হয় ম্যানচেস্টার সিটির; এই দ্বৈরথ তো শহর কেন্দ্রিক। একই শহরের দুই ক্লাবের লড়াই হলে বলা হয় ডার্বি। এছাড়া একই শহরের দুই ক্লাবকে ‘চিরশত্রু’ শব্দ লিখতে ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার করা হয়। রিয়াল-বার্সাকে বোঝাতে চিরশত্রু শব্দটা লিখতে ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার না করলেও চলে। কারণ এই শত্রুতা যে আক্ষরিক অর্থেই!

Advertisement

এল ক্ল্যাসিকোর লড়াইটা স্পেনের দুটি ভিন্ন শহরের। ইতিহাস বলছে, এই দুই শহরের মধ্যে কোনো কিছুতেই মিল নেই! একদিকে বামঘেঁষা স্বাধীনচেতা কাতালানদের দল- বার্সেলোনা। অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীতে পুরো ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের একনায়ক ফ্রাঙ্কো ও রাজন্যবর্গের দল- রিয়াল মাদ্রিদ।

রিয়াল মাদ্রিদের পূর্ব নাম মাদ্রিদ এফসি। ফ্রাঙ্কো এসে তাতে যুক্ত করলেন রয়্যাল শব্দটি, যেটির মানেই রাজকীয়তা। তাদের খেলাতেও সেই আভিজাত্য। একই আভিজাত্যে ইউরোপ শাসনও। রিয়ালই একমাত্র ক্লাব, ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের সংখ্যা যাদের দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে। অহংকার করার ক্ষেত্রে তো রিয়ালকেই মানায়।

এদিকে স্পেন রাজাদের শাসন থেকে কাতালানরা বেরিয়ে আসতে চায়। বাস করতে চায় স্বাধীনভাবে। কে জানত- অস্ত্র নয়; স্বাধীনতার এই লড়াইয়ের অন্যতম প্রেরণাকেন্দ্র হয়ে উঠবে মাঠের ফুটবল! প্রায় সাড়ে ছয় শ কিলোমিটার দূরত্বের দুই শহরের দর্শনের ব্যবধানও অনেক। তা সে ফুটবলীয় দর্শনই হোক কিংবা রাজনীতি। দুই দলের জার্সির ধরন-ধারণেই এত পার্থক্য, সেটাই যেন বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের ভিন্নতার প্রতীক।

Advertisement

স্পেনের ফুটবলে এই দ্বৈরথ পরিচিত লাভ করে এল ক্ল্যাসিকো নামে। আজ সেই ঐতিহাসিক এল ক্ল্যাসিকো। রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচটি গড়াবে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স ও সনি ইএসপিএন।

ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আবেদন থাকে বিশ্বকাপে। সম্ভবত ফুটবলীয় লড়াইয়ে এল ক্ল্যাসিকোই তার পরের অবস্থানে। ক্লাব পর্যায়ে সবার ওপরে; তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াইয়ের যে ঐতিহ্য আর ইতিহাস, তা ফুটবলের ইতিহাসে আর কোথাও নেই।

নিয়মানুযায়ী প্রতি মৌসুমে অন্তত দু’বার মুখোমুখি হয় রিয়াল-বার্সা। স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগায় (লা লিগায়) হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে দু’বার মুখোমুখি হবেই। মৌসুমের প্রথম লড়াইটা অনুষ্ঠিত হয়েছে আগেই। বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে। ওই ম্যাচে কেউ জেতেনি; ১-১ ব্যবধানে ড্র হয়েছে। এবার ফিরতি লেগে মুখোমুখে হচ্ছে দুই দল।

এবারের এল ক্ল্যাসিকোর প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন। বার্সেলোনা এবার রয়েছে খাদের কিনারে। তার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নেইমারের খেলা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। দলের আরও কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন ইনজুরির কবলে।

Advertisement

পয়েন্ট টেবিলেও পিছিয়ে বার্সা। লুইস এনরিকের দলের অবস্থান দ্বিতীয়। দুদলের পয়েন্টের ব্যবধান ৩। শীর্ষে থাকা রিয়ালের সংগ্রহ ৩১ ম্যাচে ৭৫ আর বার্সার ৩২ ম্যাচে ৭২। এই ম্যাচটি বার্সার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপা দৌড়ে টিকে থাকতে আজ জিততেই হবে মেসি-সুয়ারেজদের।

এছাড়া সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়েছে বার্সা। ইউরোপের সবচেয়ে জমজমাট আসর থেকে ছিটকে পড়ায় কাতালান শিবির এখন হতাশাগ্রস্ত। অপরদিকে একই আসরে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছে রিয়াল। সাম্প্রতিক সব হিসাব-নিকাশই রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে কথা বলছে।

তবে জয়ের প্রত্যাশাই বার্সা কোচ লুইস এনিরকের। তবে ছন্দে থাকা রিয়ালকে সমীহ করছেন, ‘এল ক্ল্যাসিকো আমাদের জন্য বিশেষ একটি ম্যাচ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের বিপক্ষে খেলা। যা কিনা এখন লিগ টেবিলের শীর্ষে। আমরা নিজেদের মতোই খেলতে চাই। এই ম্যাচে জিততে পারলে অনেক ভালোই হবে।’

অনেকের মতে, আজকের ফলই নির্ধারণ করে দিতে পারে লা লিগার শিরোপা। রিয়াল মাদ্রিদ বস জিনেদিন জিদান কিন্তু সেটা মনে করেন না। ভাবছেনও না। জিদানের ভাষায়, ‘প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছি না। নিজেদের নিয়ে ভাবছি। এটা কোনো শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ নয়। সেটা ভাবলে চাপ সৃষ্টি হবে। আমরা পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য যা করা দরকার, তা-ই করব।’

এনইউ/পিআর