তালা ও গ্যাস লাইট মেরামত করে সংসার চালান জাবেদ আলী। খেয়ে না খেয়ে স্বামী-স্ত্রী আর চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল। কিন্তু ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল কেড়ে নিয়েছে সুখ। বাবার দেয়া সামান্য জমি-বাড়ি ছাড়ার প্রহর গুনছেন। হলদে কাপড়ে ঝুলিয়েছেন ‘জমিসহ বাড়ি’ বিক্রির বিজ্ঞপ্তি। পুলিশ দেখলে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান। রামগোপালপুর ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের জাবেদ আলীর মতো সহায় সম্বলহীন শত কৃষকের বাড়ি-ভিটা কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়েছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে। আবেদন-নিবেদনের দেড় বছর অতিক্রান্ত তবু নিশ্চুপ ঈশ্বরগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ।কোথায় যাবে জাবেদ আলীর পরিবার? সদুত্তর নেই। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘জেলে তো আর যেতে হবে না!’ বিদ্যুতের খুঁটি দেখে যে সুখ দেখেছিল তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অন্ধকারে টিমটিম করে জ্বলতো কুপি বাতি। এ জ্বালা খতম করতে চেয়েছিল এই দম্পতি। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ পুরো সংসারের সুখ খতম করে দিয়েছে। মাত্র ১০০ওয়াটের একটি বাল্বের যে আলোয় আলোকিত হলো পুরো ঘর। এখন সেই ১০০ ওয়াটের বিলের ভারেই অন্ধকারে তার পরিবার। গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্যবাজারে ছালার চটে বসে যোগাড় করেন ৭জনের আহার। বিদ্যুৎ মিটারে যে মাসে ব্যবহার করে ৩২ ইউনিট ওই মাসে দেয়া হয় ৩৭ হাজার টাকার বিল। দৌড় শুরু হয় স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন জাবেদ আলীর। ভুল সংশোধনের আবেদন। প্রতি মাসে ঈশ্বরগঞ্জ আবাসিক প্রকৌশল (বিদ্যুৎ) বিভাগে দৌড়ঝাপ। সংশোধনের কাঠগড়ায় ১৮মাসেও মুক্তি মেলেনি। মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত তার ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ৮৯৩ ইউনিট। দেয়া হয়েছে ৪৯হাজার ২শ টাকার বিদ্যুৎবিল। যা জাবেদ আলীর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব না। এর ফলে কেটে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ, সঙ্গে গ্রেফতারের হুমকি। আর এ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে ঝুলছে জমিসহ বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি। শুধু জাবেদ আলীই নয় এ গ্রামের মনোহারি দোকানদার আব্দুল গনিকে দেয়া হয়েছে ৮হাজার, চায়ের দোকানদার বেগমকে ১২হাজার টাকার বিদ্যুত বিল। অনুরূপভাবে ২৭জন গ্রাহককে ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ভূতুড়ে বিল ধরে দেয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের মো. বাছির উদ্দিনকে দু’দফায় দেয়া হয়েছে ৪২হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল। এ গ্রামের অর্ধশত গ্রাহককে দেয়া হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চেয়ে ছিলেন কৃষক মো. আলী আকবর। তাই নিয়মানুযায়ী বিচ্ছিন্ন করেন বিদ্যুৎ লাইন। কিন্তু মৃত লাইনে জীবিত বিল! অবাক করেছে এলাকাবাসীকে। ১৫হাজার ৯শ ৬৮টাকা বিলের কাগজ নিয়ে ছুটছেন সমাধানের সন্ধানে। দেশের সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের বিল অপরিবর্তনীয়। এ মহাসংকটে হাজারো গ্রাহক। ডিজিটাল মিটার বদলের নামে চলছে ডিজিটাল দুর্নীতি ও অনিয়ম। জনৈক রশিদ কেরানি গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসে মাসে নিচ্ছেন সমাধান ফি (ঘুষ)। তবু গ্রাহকরা পাচ্ছেন না সমাধান। জাবেদ আলীর ঘটনা স্বীকার করে ঈশ্বরগঞ্জ আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বরাবর আবেদন করতে তাকে বলা হয়েছে।এসএস/এমএস
Advertisement