একাত্তরে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে বাগেরহাটের ১৪ জন মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য ৩১ মে দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
Advertisement
এ মামলায় আসামিরা হলেন, বাগেরহাটের খাঁন আশরাফ আলী (৬৫), খাঁন আকরাম হোসেন (৬০), সুলতান আলী খাঁন (৬৮), রুস্তম আলী মোল্লা (৭০), ইদ্রিস আলী মোল্লা (৬৪), মকছেদ আলী দিদার (৮৩), শেখ মো. উকিল উদ্দিন (৬২), শেখ ইদ্রিস আলী (৬১), শেখ রফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৬৪), মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার (৬৯), মো. হাশেম আলী শেখ (৭৯), মো. আজাহার আলী শিকদার (৬৪), মো. মকবুল মোল্লা (৭৯), মো. আব্দুল আলী মোল্লা (৬৫)। এর মধ্যে আজহার আলী শিকদার বিএনপি সমর্থক। বাকি সবাই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে একই বছর খাঁন আকরাম হোসেন, ইদ্রিস আলী মোল্লা, শেখ মো. উকিল উদ্দিন এবং মকবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। বাকি ১০ আসামি পলাতক।
আদালতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানাদাস গুপ্ত, মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম। প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মু্ন্নি জাগো নিউজকে জানান, একজন বিচারপতি উপস্থিত না থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ না দিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। তিনি জানান, এর আগে গত বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে সাত অপরাধের আনুষ্ঠানিক চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) প্রসিকিউশন টিমের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
Advertisement
২০১৫ সালের ৪ জুন তদন্ত শুরু করে গত ২২ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৭ জন মূল ও ৩ জন জব্দ তালিকার সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তদন্ত সংস্থা। পরে ওই দিনই তাদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তা প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়া হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট জেলার কচুয়া ও মোড়েলগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার মতো সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত করেন সংস্থার সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন।
আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগ :
প্রথম: বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার চাপড়ী ও তেলিগাতী এলাকার মানুষদের উপর হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়িতে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং ১০ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
Advertisement
দ্বিতীয়: কচুয়া থানার হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে চারজনকে আটক ও অপহরণ করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেয়া হয়।
তৃতীয়: মোড়েলগঞ্জ থানার ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুজনকে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ। চতুর্থ: কচুয়া থানার বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে ৪ জনকে কাঁঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পঞ্চম: কচুয়া থানার বিলকুল গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে ধরে নিয়ে মোড়েলগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের উপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
ষষ্ঠ: কচুয়া থানার উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে উকিল উদ্দিন মাঝিকে আটক করে হত্যা এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। পরে তাসলিমাসহ চার নারীকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।
সপ্তম: কচুয়া থানার গজালিয়া বাজারে হামলা করে শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা এবং তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে রাজাকার ক্যাম্পে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ। প্রায় একমাস নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি।
এফএইচ/এমএমএ/ওআর/আরআইপি