দেশজুড়ে

‘এখানে তো একটি ছাগলও মরেনি’

সুনামগঞ্জকে যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কোনো জ্ঞান নেই উল্লেখ করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে কোনো এলাকার অর্ধেকের উপরে জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়। এখানে তো একটি ছাগলও মেরেনি।

Advertisement

বুধবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিবের এমন মনগড়া তথ্য শোনার পর উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সেইসঙ্গে ফসলহারা কৃষকের পক্ষে আন্দোলনকারীদের নিয়ে সচিবের এমন কটূক্তির প্রতিবাদে উপস্থিত অধিকাংশ গণমাধ্যম কর্মীরা সভা থেকে বেরিয়ে আসেন।

সভায় উপস্থিত সুধিজনরা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর ২২ ধারার কোনো উপধারায় দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কোনো শর্তের কথা উল্লেখ নেই।

Advertisement

সভার প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফসলহারা কৃষকদের প্রতি আন্তরিক রয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি ও সামর্থ রয়েছে। ছয় মাস নয় প্রয়োজনে ছয় বছর হাওরাঞ্চলের কৃষকদেরকে খাওয়াবে শেখ হাসিনার সরকার। তবু কাউকে এ সরকার না খেয়ে মরতে দেবে না।

শেখ হাসিনার গোডাউনে খাদ্যের কোনো অভাব নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যতোদিন পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের পানি না সরে ততদিন পর্যন্ত কৃষকদের খাদ্যের যোগান দেবে সরকার।

এসময় মন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলার দেড় লাখ পরিবারকে তিন ধরনের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভায় সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হলে কোনো এলাকার অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যেতে হবে। সচিবের এমন বক্তব্যের দ্বিমত পোষণ করেছি। আমি বলেছি মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুনামগঞ্জে মতবিনিময় সভায় জাতির জনকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, না কাঁদলে মা-ও দুধ খাওয়ায় না।

Advertisement

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি, অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল, জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সেলিম আহমদ তালুকদার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরে সুনামগঞ্জের অকালে তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ও কোথাও কোথাও বাঁধ না হওয়ায় একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ বোরো চাষি সর্বশান্ত হয়ে যায়। জেলাজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ এপ্রিল শহরের আলফাত স্কয়ারে (ট্রাফিক পয়েন্ট) সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ জনসভা করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান।

একই দিন দুপুরে স্থানীয় শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট ও পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল।

এছাড়া দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে `হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন` নামের একটি সামাজিক সংগঠন। সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী। জেলা আইনজীবী সমিতিও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানায়।

সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে জেলা শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। এদিকে, গত ১৭ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সুধীজনের মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জের এমপি রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকার ঘোষণার দাবি জানান।

রাজু আহমেদ রমজান/এফএ/পিআর