তারকা ফুটবলার নেইমার বার বার বলছিলেন, আমরা পারবো। আবারও একটি মিরাকল ঘটানোর ক্ষমতা আমাদের রয়েছে; কিন্তু প্রতিটি দল তো আর পিএসজি নয় যে, ঘরের মাঠে তাদেরকে একেবারে মুড়িয়ে দেয়া যাবে। সুতরাং, বার্সেলোনা এবার আর পারেনি। জুভেন্তাসকে ৪ গোলের ব্যবধানে হারানো তো দুরে থাক, তাদের জালে বলই প্রবেশ করাতে পারেনি। ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি হয়েছে গোলশূন্য নিষ্প্রাণ ড্র।
Advertisement
আগের ম্যাচে জুভেন্তাসের ঘরের মাঠে ৩-০ গোলে হেরে এসে নিজেদের মাঠে গোল করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত দুই লেগ ৩-০ গড় গোলের ব্যবধানে হেরে গেলো বার্সা। সুতরাং, কোয়ার্টারেই শেষ হয়ে গেলো তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্ন। তাদেরকে হারিয়ে সেমি ফাইনালে উঠে গেলো জুভেন্তাস।
নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে জয়ের কারনে ন্যু ক্যাম্পে এসে আর ঝুঁকি নিতে চাননি ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি। বিশেষ করে পিএসজির অভিজ্ঞতাটা তাদের মাথায় ছিল বেশ। এ কারণে, দেখা গেলো ন্যু ক্যাম্পে জুভদের রক্ষণভাগে কঠিন রক্ষণ দেয়াল। যে দেয়ালে এসে বার বার ধাক্কা খেতে হয়েছে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের। এবং তারা ব্যর্থ হয়েছে আরও একটি অবিশ্বাস্য কামব্যাকের ইতিহাস তৈরি করতে।
বরং, প্রথমার্ধে তো বার্সেলোনার অতি আক্রমণের সুযোগ নিয়ে জুভেন্তাসই কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের দারুণ দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল। প্রথমে গঞ্জালো হিগুয়াইন বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আবার হুয়ান কুয়াদ্রাদোর মাথার ওপর দিয়ে করা ফ্লিক অনেক ওপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। না হয়, উল্টো গোল হজম করেই মাঠ ছাড়তে হতো কাতালানদের।
Advertisement
১৯ মিনিটে একটা সুযোগ পেয়েছিলো বার্সা। গোলের সামনে লব করেছিলেন মেসি। পোস্টের সামনে ছিলেন জর্দি আলবা। শুধু পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল হতো; কিন্তু সেটাই করতে ব্যর্থ হলে আলবা। মাত্র এক মিনিট পরই ন্যু ক্যাম্পকে উত্তাল করে দিতে পারতেন মেসি; কিন্তু তার বাঁ পায়ের শট একেবারে সাইড বারের পাশ ঘেঁষে চলে গেলো বাইরে।
মেসি দুর থেকেও বাঁ পায়ের জোরালো শটে চেষ্টা করেছিলেনএকবর জুভেন্তাসের জালে বল জড়াতে; কিন্তু তার শট শেষ দেয়াল, জিয়ানলুইজি বুফনের কাছে গিয়ে আটকে গেলো।
বার্সা খেলোয়াড়দের বার কয়েক দেখা গেলো রেফারির কাছে জুভেন্তাস ফুটবলারদের হার্ড ট্যাকল নিয়ে অভিযোগ জানাতে। কারণ, দেখা গেলো মেসি বল নিয়ে টান দিলেন, পেছন থেকে শার্ট টেনে ধরলো জুভেন্তাসের কোনো ফুটবলার। বক্সের ওপর বল নিয়ে গেলেন নেইমার, সঙ্গে সঙ্গে হার্ড ট্যাকলে তাকে ফেলে দেয়া হলো। সুয়ারেজকেও ঠিক একইভাবে বাধার সৃষ্টি করা হলো; কিন্তু বার্সা ফুটবলারদের কোনো অভিযোগই আমলে নেননি রেফারি। অর্থাৎ, ম্যাচটিতে খেলার চেয়ে শারীরিক সংঘর্ষই যেন হলো বেশি।
তাতে জড়ালেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং নেইমারও। কুয়াদ্রাদোকে ফাউল করার অপরাধে প্রথমে হলুদ কার্ড খেলেন ইনিয়েস্তা। এরপর হলুদ কার্ডের শিকার হলেন নেইমারও। বার্সা যদি সেমিতে উঠতো, তাহলে সেমির প্রথম লেগের ম্যাচ খেলতে পারতেন না তিনি।
Advertisement
পুরো ম্যাচজুড়ে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা চেষ্টা করছিলেন জুভেন্তাসের জালে একটিবার অন্তত বল জড়ানোর। কখনও মেসির ফ্রি কিক, কখনও ভলি- কোনটাই কাজে লাগেনি। কোনোটা চলে গিয়েছে পোস্টের ওপর দিয়ে। কোনোটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন বুফন। জুভরা ব্যস্ত ছিল রক্ষণ সামলাতেই বেশি। তবুও দু’একটি যা চেষ্টা করেছিল, সেগুলোর কোনোটাই কাজে লাগেনি। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্রতেই শেষ হলো ম্যাচ।
ম্যাচ শেষে দেখা গেলো কান্নারত নেইমারকে স্বান্তনা দিচ্ছেন দানি আলভেজ। যিনি গত মৌসুমেও ছিলেন মেসিদের সতীর্থ। অথচ, এই ম্যাচে খেলতে এলেন প্রতিপক্ষ হয়ে। আবার জিওর্জিও কিয়েল্লিনিকে দেখা গেলো সুয়ারেজের সঙ্গে হাত মেলাতে। গত বিশ্বকাপে কিয়েল্লিনিকে সুয়ারেজের কামড় কাণ্ডের সেই রেশ যেন মন থেকে মুছে ফেলেছেন দু’জনই।
আইএইচএস/