আইন-আদালত

রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতায় এরশাদ খালাস

বিমানের রাডার ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খালাস পেয়েছেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মামলার অপর দুই আসামিকেও খালাস দেয়া হয়।

Advertisement

রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর এটি আমরা কমিশনে উপস্থাপন করব। কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দায়ের করা হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে এরশাদ সাহেব সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ ছিলেন। তিনি তার হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছেন।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘দুর্নীতির এ মামলায় কে, কিভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন; কিভাবে সহযোগিতা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ তা উপস্থাপন ও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

Advertisement

‘এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব আনিসুজ্জামান এবং স্বীকারোক্তি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এসব কারণে আসামিদের খালাস দেয়া হলো’- বলেন আদালত।

রায় ঘোষণার পর জাগো নিউজের পক্ষ থেকে খালাস পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের অভিমত জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এ সময় ফুরফুরে মেজাজে তাকে দেখা যায়।

আদালতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা পরে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় তারা নানা শ্লোগানও দেন।

মামলায় খালাস পাওয়া অপর আসামি মমতাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক একটি মামলাতে এতদিন অভিযুক্ত ছিলাম। রায়ে খালাস পাওয়ার পর মনে হচ্ছে, এত বছর পর মাথা থেকে একটি ভারি বোঝা নেমে গেছে।’

Advertisement

মামলার রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন খালাস পাওয়া সুলতান মাহমুদ। তার আইনজীবী শামসুদ্দীন বাবুল বলেন, ‘এ মামলার কারণে সুলতান মাহমুদ পেনশনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মামলাটির কারণে তিনি অনেক ক্ষতির মুখে পড়েন। কেবল রাজনৈতিকভাবে তাকে ঘায়েল করার জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়। শেষ পর্যন্ত এ মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি পেলেন তিনি।’

১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি করে। ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

অভিযোগে বলা হয়, বিমান বাহিনীর তৎকালীন সহকারী প্রধান মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে বাহিনীর জন্য যুগোপযোগী রাডার ক্রয়ের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানি নির্মিত অত্যাধুনিক একটি হাইপাওয়ার রাডার ও দুটি লো লেভেল রাডার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদসহ অপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে থমসন সিএসএফ কোম্পানির রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার কেনেন। এতে সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা ক্ষতি হয়।

জেএ/এমএআর/জেআইএম