সাহিত্য

মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের চারটি কবিতা

দেহভিটা

Advertisement

কথকের দাঁতে তোমার হাসিগুলো গেঁথে আছে স্থিরযত্নবান উইপোকাও শোনেনি সেইসব রাতের শীৎকারযারা নুয়ে পড়েন অজস্র চেরীফুলের স্বপ্ন নিয়েঅথবা রোদ হতে চাইতেন যেসব প্রেমিকযুগলতাদের মৃত্যুতে জ্যোৎস্নারা আসেনি; কেবলশীতল উন্মাদের মতো বৃষ্টির ট্রেনেভেসে এলো মুমূর্ষু গ্রাম, আততায়ীর রক্ত!

তখনো আলোর ফুৎকারে রাত হয়নিদেহভিটায় আঁতকে ওঠেনি হাবিয়ার কষ্টেরা...তখনো আকাশ চিরে মাঝিরা জাগেনি

কেবল তুমিই প্রথম জেনেছিলে— দিনেরা বেঁচে নেই। খুন হয়েছে নিঃশ্বাসগুলি...

Advertisement

****

বন্দী

অতঃপর এমনও হতে পারেতোমাকে সূর্যের গৃহিণী করেছিআর আমি শিশিরের জলে বন্দী

এমনও হতে পারে তোমরা সুখে থাকবেতোমাদের ছেলেরা বহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে যাবেএমনও হতে পারে— তারা জানবে নাআমি ছিলাম অতীতের কেউ, ঢেউ নিয়ে সময় করেছি পার তোমার শরীরেহয়তো তারা জানবে পৃথিবী গোল, বেদনা নীল নদীজানবে না— লোকটা কবি ছিলো, একান্ত প্রেমিক!

Advertisement

তোমাকে সূর্যের গৃহিণী করেছিতুমি আকাশের বন্দীআর বন্দীরা সুখী হয় না কখনো...

****

কবিতা

মুঠো খুলে দেখিচিকচিক রোদে দাঁড়িয়ে আছে হেমন্ত সকালতার চোখে পৃথিবীর ঘুম, যাবতীয় অক্ষরআর প্রবাহমান মেঘনার করাল স্রোত—

করতলে দেখি হেসে উঠেছে মাছরাঙা, ফুলবেজে চলছে সাতই মার্চ, বাংলাদেশমঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছে তীব্র আঙুল— আমি উচ্চস্বরে সোনার বাংলা মুখেহেঁটে যাই চৌষট্টি হাজার গ্রাম, তেরশত নদী—

এবং কান পেতে শুনি মেঘের পাহাড়েচর্যার শ্লোকে, অনাগত অক্ষরেশুনি প্রাচীন বৃক্ষ, পাতার শরীরেধূসরিত মুখের ধ্রুব হাতছানি মেখে আমি শুনে যাই প্রিয় স্বদেশ,রক্তে লেখা হৃদয়ের সহস্র ধ্বনি, কবিতা...

****

শারীরিক জ্যোৎস্না

যতদূর পায়ের রেখা অক্ষত থাকেপাখিরা ওড়ে, বনে বনে মেঘের নামতা নামেততদূর হাওয়ায় ভাসে তোমার শাড়ি—

তখন বৃষ্টির পাঁচটি ফোঁটা পড়ে মগ্ন তন্দ্রায়চোখের ভেতর ঢুকে পড়ে রোদ, তোমার বাড়িআমি আড়াআড়ি থাকি বৃক্ষের যৌবনেসন্ধ্যা নামে; আর জ্যোৎস্না নামে শরীরে তোমার ভারি!

এতটা পথ রাত নামলো, রাত— আমি ধুলোর তুলিতে আঁকি জাগতিক মুখ, উদোম শরীরপেছনে পড়ে থাকে বৈশাখী রোদ, দেহহীন শাড়ি

তোমার শরীর বেয়ে জ্যোৎস্না নামে পৃথিবীতে...

এসইউ/পিআর