শিশু একাডেমি থেকে হাইকোর্ট যাওয়ার পথে উত্তর দিকের ফুটপাতে বসে সোমবার মধ্য দুপুরে বকুল ফুলের মালা গাঁথছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী। প্রচণ্ড গরমে দর দর করে কপাল বেয়ে ঝরছিল ঘাম। তবুও তিনি নিচু হয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ওপর বিছিয়ে রাখা বকুল ফুলগুলো একটি একটি করে কাঠিতে ঢুকিয়ে মালা তৈরি করছিলেন।
Advertisement
নারীর পরনের ব্লাউজের হাতায় অসংখ্য ছিদ্র, শাড়ির বিভিন্ন স্থানেও বড় বড় ছিদ্র। কোথাও আবার সুই-সুতার সেলাইয়ের চিহ্ন।
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক নারীর নাম ও বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে কিছুটা ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, ‘নাম-ঠিকানা জাইন্যা কোনো লাভ নাই, ফুল কিনলে কন, এক দাম ২০ ট্যাকা। নইলে নো ডিস্টার্ব।’
এমন সময় রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। রিকশায় বসেই এক ভদ্রলোক বকুল ফুলের গন্ধ আছে কিনা- জানতে চাইলে ওই নারী তার দিকে চেয়ে অবহেলার হাসি হেসে বলেন, ‘বকুল ফুলের গন্ধ যে অনেকদিন থাকে তা জানেন না।’ নারীর কথা মেনে নিয়ে ২০ টাকায় একটি মালা কিনলেন ওই ভদ্রলোক।
Advertisement
কিছুক্ষণ পর আবারও নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে এবার তিনি জানান, তার নাম রেনু বেগম। হাইকোর্ট এলাকাতেই গত ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি বরিশালের পিরোজপুরে।
রেনু বেগম জানান, প্রতিদিন ভোরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও কার্জন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঘুরে বকুল ফুলের গাছের নিচ থেকে ঝরা ফুল সংগ্রহ করেন। এরপর তা দিয়ে মালা গেঁথে বিক্রি করেন।
‘বকুল ফুলের মালার খুব চাহিদা’ উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, মাত্র ২০ টাকা হওয়ায় কম-বেশি সবাই তার কাছ থেকে মালা কেনেন। একমাত্র ছেলে রিকশা চালায়। দুজনের আয়ে কোনোরকম দিন কাটছে।
চলে আসার সময় কড়া ভাষায় কথা বলার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেন রেনু বেগম।
Advertisement
এমইউ/এমএআর/আরআইপি