অর্থনীতি

১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরে অনড় অর্থমন্ত্রী

আগামী ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। ১৫ শতাংশ হারে নতুন এ ভ্যাট আইন কার্যকরে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

Advertisement

তিনি বলেছেন, ‘কোনোভাবেই ভ্যাট কমানো হবে না এবং তা আগামী অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যকর হবে।’ তবে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন।

নতুন ভ্যাট আইন বিষয়ে সোমবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক শেষে মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।

ভ্যাট আইন কি আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে? বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অফকোর্স কার্যকর হচ্ছে। রেট কী হচ্ছে, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আই হ্যাভ টোল্ড দেম দ্যাট ইট ইজ গোয়িং টু বি ইফেক্টিভ ফার্স্ট অব জুলাই। রেট উইল বি অনলি ১৫ পারসেন্ট।’ এই দুই বিষয় ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, সেটা তাদের জিজ্ঞেস করেন।

Advertisement

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যবসায়ীদের মধ্যে এসবিসিসিআই’র সভাপতির চলতি দায়িত্বে থাকা সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, একে আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও ভ্যাট আইন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ প্রমুখ।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে ফলপ্রসু এবং যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। শেষ করার আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষুদ্র আকারে আরেকবার বসবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায়। আমাদের অনেক কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের একদিকে ভ্যাট আইনটা যেমন কার্যকর করতে হবে। অপরদিকে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থকেও রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে আমাদের দেশীয় শিল্প সেগুলোও আলোচনা করতে হবে। কারণ আমরা তো আমাদের দেশীয় শিল্পকেও সংরক্ষণের চেষ্টা করি।

অর্থমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস তিনি বলে গেছেন, এই সরকার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, এমন সিদ্ধান্ত হবে, যাতে জনগণ খুশি হবে, ব্যবসায়ীরাও খুশি হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, দেশে ২ কোটি ২৪ লাখ প্রান্তিক ব্যবসায়ী রয়েছে। কিন্তু ভ্যাট পাই আমরা একেবারেই কম। এই মার্জিনাল বিজনেস কমিউনিটির জন্যই আমরা এখানে রিপ্রেজেন্ট করছি। আমরা চাই এটা সিমপ্লিফাইড ওয়েতে এবং বিজনেস কমিউনিটিকে যুক্ত করে তারপর যাতে ভ্যাট আইনের প্রয়োগ করা হয়।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ২০১২ সাল থেকে এটা ড্রাগ করছে, সেহেতু অবসারভেশন ইজ জেনুইন। তিনি এটা বিবেচনায় নিয়েছেন। উনি নোট নিয়েছেন এবং আমাদের বলেছেন, আরেকবার আলোচনা করে বাস্তবায়নে যাবেন।’ ভ্যাট ১০ শতাংশ রাখতে ব্যবসায়ীদের দাবি মন্ত্রী মেনে নিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও তিনি সিদ্ধান্ত দেননি।

Advertisement

আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর হবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের বিষয়গুলো সুরাহা করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যেন তা করা হয়। আমরা মনে করি, এটি জনগণের সরকার। জনগণের সেন্টিমেন্ট এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সেন্টিমেন্টকে উপেক্ষা করে এটি করা হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আলোচনা করে দাবি আদায়ের সময় এখনও আছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার কোন বিকল্প নাই। আমরা আশা রাখতে চাই।

এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও ভ্যাট আইন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ বলেন, আমরা যেটা বলতে চাই, অর্থমন্ত্রী কিন্তু এক্সটেনশন অব ব্যুরোক্রেসি না। আমলারা যা বলে দেবে, তা করা তার কাজ না। উনি জনগণের প্রতিনিধি। তাকে কনজুমার ইন্টারেস্ট দেখতে হবে। ১৫ শতাংশের টোটাল ভ্যালু কনজুউমার লেভেলে যাতে ৪৫ শতাংশ না হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যারা কিনে কনজুমারের কাছে বিক্রি করেন, সেখানে ভ্যাটের রেট যেন দশমিক ৫ শতাংশের বেশি না হয়। ইউরোপে এটা দশমিক ৮ শতাংশ। আমাদের এখানে যাতে সবাই ভ্যাট দিতে আগ্রহী হয়। ১৫ শতাংশ দিতে হলে কেউ আগ্রহী হবে না। তাতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। মুদ্রাস্ফীতি হবে।

মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, এটাকে নাগালের মধ্যে রাখুন। এ জন্য দশমিক ৫ শতাংশ করুন। এখন উনি যেটা বিবেচনা করেন। আমরা প্রতি একশত টাকায় ৫০ পয়সার প্রস্তাব করেছি, সরকার ১টাকা করলেও আমাদের আপত্তি নাই। এটা হলে কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স বাড়বে না। জিনিসপত্রের দাম নাগালে থাকবে। বিবেচনা করবেন বলেছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেটে যদি সে রকম খোলাসা পাই, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তো যাবই। যেমন অঙ্কগুলো যদি না মেলে, যেমন একটা বিজনেসের টার্নওভার ৮০ লাখ টাকা থেকে আমরা ৫ কোটি বলেছি। যেমন এখানে যদি ১ কোটি টাকা দেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমরা এ বিষয়ে আলাপ করছি। আমরা অন্য সময়ের চেয়ে আজকে বেশি আশাবাদী।

এমইউএইচ/ওআর/আরআইপি