ঘড়ির কাটায় ঠিক সন্ধ্যা পৌনে ৬টা, প্রস্তুত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। বিউগলের সেই মধুর সুরে শুরু হলো দুই দেশের জাতীয় পতাকা নামানো বা ‘ফ্ল্যাগ ডাউন’-এর আনুষ্ঠানিকতা। এরপর দুই দেশের সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে একজন বিএসএফ সদস্য এসে আরেকজন বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে করমর্দন করলেন। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের প্রতিদিনকার চিত্র।এই চিত্র দেখতে সীমান্তের দুই পারে হাজারো বাংলাভাষাভাষি প্রতিদিন এসে ভীড় জমান। তবে দিনের বেলা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডের পাশে কেউ যেতে না পারলেও সন্ধ্যায় পতাকা নামানোর এই নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের জন্যই উন্মুক্ত করে দিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ। অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে পতাকা নামানোর এই অনুষ্ঠান অনেকটা দুই বাংলার মিলনমেলায় পরিণত হয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, শহরে বিনোদনের তেমন কোন জায়গা নেই। তাই মাঝেমধ্যেই খানিকটা বিনোদনের আশায় তারা ছুটে আসেন আখাউড়া স্থলবন্দরের নোম্যান্সল্যান্ডে। পতাকা নামানোর এই মনোরম দৃশ্য দেখে তারা মুগ্ধ হন। পাশাপাশি বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক দেখে পূলকিত হন তারা।এদিকে অনেক আদি বাংলাদেশি বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আগরতলায় বসবাসরত এসব আদি বাংলাদেশিদের বেশিরভাগেরই বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলে। তবে ভিসা জটিলতার কারণে অনেকে সবসময় বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতে না পারলেও বাংলাদেশের খবর জানতে তাদের মধ্যে আগ্রহের কোন কমতি নেই। প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি এই টান থেকেই তারা প্রতিদিন ছুটে আসেন আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে।পতাকা নামানোর অনুষ্ঠান দেখতে এসে তারা বাংলাদেশের মাটি ছুঁয়ে সালাম করেন, কেউবা আবার বাংলাদেশে ফেলে আসা স্বজনদের কথা মনে করে অশ্রুজলে মুখ ভাসান। অনেকেই হাত নেড়ে ইশারায় কথা বলেন স্বজনদের সঙ্গে।যেকোন বিশেষ দিনে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খান বিজিবি সদস্যরা।এ ব্যাপারে বিজিবির আখাউড়া সদরের কোম্পানি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সীমান্তে ‘ফ্ল্যাগ ডাউন’ অনুষ্ঠানটি দর্শনার্থীরা যেন সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারেন সেজন্য আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের সড়কটি আরো প্রশস্ত করে একটি গ্যালারি তৈরির জন্য বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃপক্ষের মধ্যে মৌখিকভাবে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তবে এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।এমজেড/আরআই
Advertisement