১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সেই অস্থায়ী সরকারের স্মৃতি ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। যার নাম মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ইতিহাসের সাক্ষী এই স্মৃতিসৌধ দেখে আসতে পারেন সবাই।
Advertisement
অবস্থানমুজিবনগর স্মৃতিসৌধ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে (বৈদ্যনাথতলা) অবস্থিত। এর স্থপতি তানভীর করিম।
লাল মঞ্চ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সিরামিকের ইট দিয়ে একটি আয়তকার লাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ভিতরে মাঝখানে।
স্মৃতিস্তম্ভস্মৃতিসৌধটি ২৩টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত। যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ২৩টি দেয়াল ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। যা দ্বারা বোঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে।
Advertisement
বুদ্ধিজীবীর খুলিস্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবীর খুলিকে বোঝানো হয়েছে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদস্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯টি জেলাকে বোঝানো হয়েছে।
এগারোটি সিঁড়িস্মৃতিসৌধের বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে। যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরস্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আম বাগান ঘেঁষা স্থানটিতে মোজাইক করা আছে। এর দ্বারা বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগর যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণে, কিন্তু শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সঙ্গে স্মৃতিসৌধের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এটিকে উত্তর দিকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতীকস্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে। এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
রক্তের সাগরস্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। যাকে রক্তের সাগর বলা হয়।
ঐক্যবদ্ধ জনতালাল মঞ্চ থেকে যে ২৩টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে। যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
কীভাবে যাবেনমেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে আম্রকাননের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। মেহেরপুর সদর থেকে বাস ভাড়া আনুমানিক ২৫-৩০ টাকা। আম্রকানন থেকে পায়ে হেঁটে, মেহেরপুর থেকে বাস অথবা অটোরিকশাতে যাওয়া যায়। যেতে পারেন গাড়ি নিয়েও।
কোথায় থাকবেনবাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেলে আবাসনের সুব্যবস্থা আছে। এছাড়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় থাকতে পারেন। জেলা সদরে সার্কিট হাউজ, পৌর হল এবং ফিন টাওয়ারসহ অন্যান্য আবাসিক হোটেলেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
এসইউ/আরআইপি