সদ্য গ্র্যাজুয়েশন তথা বিবিএ শেষ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটরা ‘এমবিএ’ অথবা ‘চাকরি’ কিংবা এমবিএর পাশাপাশি জব, কোনটাকে বেছে নিলে ভালো হয়- তা নিয়ে বেশ দো-টানায় পড়তে দেখা যায়। বিষয়টি একাধারে বেশ চিন্তার এবং সরাসরি ক্যারিয়ার রিলেটেড। একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটের পক্ষে এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই অনেক বেশি কঠিন। এ ব্যাপারে আমার নিজস্ব মতামত আর ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাটুকুই তুলে ধরতে পারি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা একান্তই যার যার ক্যারিয়ার রিলেটেড চিন্তা-ভাবনা আর সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
Advertisement
আমার নিজস্ব মতামত হলো গ্র্যাজুয়েশন তথা বিবিএ শেষ করার পরপরই জবের জন্যে অবশ্যই আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং কাঙ্ক্ষিত জব পেলে এমবিএর জন্য বসে না থেকে জবে জয়েন করে ফেলা অতি উত্তম। এর পেছনে অনেক যুক্তি তথা উদাহরণও আছে। আমি এমন অনেককেই দেখেছি- যারা এমবিএ বা মাস্টার্স শেষ করার পর জব নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবং ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়; যার ফলে অনেককে ক্যারিয়ারে বেশ পিছিয়ে পড়তেও দেখা যায়। শুধু পিছিয়ে পড়াই নয়; উল্টো ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অভাবে অনেককেই হতাশায় ভুগতে দেখা যায়।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কাউকেই সাহস জোগানোর জন্যও পাশে পাওয়া যায় না। এক সময় হতাশা থেকে জন্ম নেয় বিষণ্ণতা‚ কনফিডেন্ট কমতে শুরু করে; জব প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে অনেকে সামাজিক ও পারিবারিক টানাপোড়েন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পরিকল্পনাহীন কোনরকম একটা চাকরিতে প্রবেশ করেন। কিছুদিন পর সে নিজেকে তার অনেক সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব এমনকী ক্ষেত্রবিশেষ জুনিয়র থেকেও পদ-পদবীতে কিংবা নিম্ন সুবিধা সম্বলিত জবে আবিষ্কার করে। হতাশা আরো প্রবল হতে দেখা যায়। শুরু হয় নতুন করে চাকরির জন্য দৌড়ঝাঁপ! এভাবে অনেকে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার খুঁজে পায়; আবার কারো কারো সংগ্রাম চলতেই থাকে।
এবার মূল কথায় আসা যাক- আমি বিশ্বাস করি, এখনকার বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ হবার অনেক পূর্ব থেকেই ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা শুরু করে। যা তাদেরকে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। এমন অনেককেই দেখার সুযোগ হয়েছে- যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার পরপরই বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে সুযোগ পেয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে চাকরির পাশাপাশি অনেকে এমবিএ বা মাস্টার্সও শেষ করেছেন।
Advertisement
আবার কেউ বা ভালো জব করছেন কিন্তু এখনো এমবিএ করেননি; সুবিধাজনক সময়ে পরে করে নেবেন বলে ভাবছেন। আবার এমনও হয়েছে যে- বিবিএ শেষ করে ক্যারিয়ার শুরু করে নামকরা কোম্পানির একটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিজ্ঞতার কারণে এমবিএ না করাটা মোটেও ওনার বা ওনাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, যারা এমবিএ বা মাস্টার্স শেষ করার আগেই ক্যারিয়ারের কাঙ্ক্ষিত পথের ঠিকানা পেয়ে গেছেন এবং সফল হয়েছেন। ওই সময় আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে সুবিধাজনক সময়ে এমবিএ করেছেন।
দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠের এক অনুজ তার ক্যারিয়ারের সন্ধান পেয়ে এমবিএ কন্টিনিউ না করে বরং চাকরিকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তর ছিল এমন- ‘আমি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, যেখানে আমার নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে এমবিএ শেষ করা সিনিয়র ভাইয়েরা আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ছেন এবং অনেকে বাদও পড়েছেন। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এমবিএ করলে আমি যে আবার এমন বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানির লোভনীয় চাকরি পাবো; তার গ্যারান্টি আছে কি? তাই চাকরিটাকেই বেছে নিলাম। এমবিএ পরে সুবিধাজনক সময়ে যেকোনো ভালো বিজনেস ইনস্টিটিউট থেকে করে নেব।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই ছেলেটি তিন বা চার বছর পর এখন আইবিএর এমবিএতে অ্যাডমিশন নিয়েছে এবং সম্প্রতি তার চাকরিতেও প্রমোশন হয়েছে।
সুতরাং কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের ঠিকানার সন্ধান পেয়ে গেলে এমবিএ বা মাস্টার্সের জন্য অপেক্ষা না করাই শ্রেয়। তাতে অভিজ্ঞতা যেমন দ্রুত বাড়ে; সফলতাও আসে দ্রুত। ভুলে যাবেন না- এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত আর অল্পকিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা! সুন্দর হোক সবার ক্যারিয়ারের পথচলা।
Advertisement
লেখক : বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা
এসইউ/জেআইএম