ফিচার

গবেষণা ও প্রশিক্ষণ : শামসুজ্জামান খান

গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শামসুজ্জামান খানকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-

Advertisement

শামসুজ্জামান খান ১৯৪০ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম এস এ খান হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি তুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড থেকে ফোকলোর প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট লাভ করেন।

পেশাগত জীবনে শামসুজ্জামান খান ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ও পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া তিনি মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

শামসুজ্জামান খান বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক-বলে গঠিত ‘ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির একজন বোর্ড মেম্বার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-এর ট্রাস্টি বার্ডের সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। এছাড়া তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জাদুঘর বিদ্যা ও ফোকলোর’ বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

Advertisement

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে শামসুজ্জামান খানের ১৯টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা পথিকৃৎধর্মী; যেমন: বঙ্গবন্ধু, মীর মশাররফ হোসেন, মওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং ফোকলোর চর্চার আধুনিকতা ইত্যাদি। গবেষণার পাশাপাশি প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, ক্রীড়া, জীবনী, শিশুতোষ রচনা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৮টি।

শামসুজ্জামান খান আপনকর্ম ও জ্ঞান-সাধনার মাধ্যমে ঋদ্ধ করেছেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনা। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস মনস্কতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সম্মিলন তাঁর চিন্তাদর্শন ও কর্মসাধনায় অনন্যরূপ পেয়েছে। তাঁর কর্মের মূল্যায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ফোকলোর ইন কনটেক্সট : এসেজ ইন অনার অব শামসুজ্জামান খান’ এবং ‘শামসুজ্জামান খান ৭৫ পূর্তি সংবর্ধনা গ্রন্থ’ প্রকাশিত হয়েছে। বই দুটিতে দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সমাজবিশ্লেষক ও ফোকলোরবিদ লিখেছেন।

শামসুজ্জামান খান ১৯৯৪ সালে দীনেশচন্দ্র সেন ফোকলোর পুরস্কার, ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০২ সালে কলকাতা কবি সংসদ পুরস্কার, ২০০৪ সালে মীর মশাররফ হোসেন স্বর্ণপদক, ২০০৯ সালে একুশে পদক, ২০০৯ সালে কলকাতা বঙ্গবন্ধু পুরস্কার এবং বর্ধমানের আসানসোলের চুরুলিয়ায় কবি নজরুল একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন।

এসইউ/এমএস

Advertisement