বিশেষ প্রতিবেদন

‘এক্কেবারে প্যাক কইরা লোকালের সাধ মিটায় দে’

এক্কেবারে প্যাক কইরা ল। কোনো জায়গাই একটু ফাঁক যেন না থাকে। গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে যাইব সবাই। লোকালে যাওনের শখ হয়েছে। শখ মিটায় দে। কোনো কাবজাব হইব না। কথা কইলেই পুলিশের সামনে গিয়া ব্রেক কইরা দিবি।’

Advertisement

কথাগুলো যাত্রাবাড়ীর এক পরিবহন শ্রমিকের। রোববার সকালে ১৫ নম্বর পরিবহনে যাত্রী ওঠানোর সময় এ কথাগুলো উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকেন ওই পরিবহন শ্রমিক। বার বার জানতে চেয়েও ওই শ্রমিকের নাম জানা যায়নি।

যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটে চলাচল করা এ পরিবহনটি আগে যাত্রাবাড়ী থেকে সকালে সিটিং সার্ভিস হিসেবে যাতায়াত করত। ফার্মগেট পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা। পথিমধ্যে যেখানেই নামুক যাত্রীদের সর্বনিম্ন এই ১৫ টাকা ভাড়া গুনতে হতো।

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করায় রোববার এ পরিবহনটিও লোকালে চলাচল করেছে। তবে কমেনি ভাড়ার পরিমাণ। ফার্মগেট পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যারা মতিঝিল বা তারও কম দূরত্বে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা।

Advertisement

যাত্রাবাড়ী মোড়ে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, সকালের দিকে যখন যাত্রীর চাপ কম ছিল সে সময় কয়েকটি ১৫ নম্বর পরিবহন যাত্রী সিটিং নিয়ে চলাচল করে। তবে সকাল সাড়ে ৯টার পর যাত্রীদের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহনটির সিটিং চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আর লোকাল চলাচল শুরুর পর থেকেই পরিবহনটি যাত্রী গাদাগাদি করে নেয়া শুরু করে। যাত্রী টইটুম্বর না হওয়া পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে না। ভেতরের সব জায়গা পূর্ণ হওয়ার পর গেটে কয়েকজন বাদুরের মতো ঝোলাঝুলি করার পর ছাড়া হচ্ছে ১৫ নম্বর পরিবহন।

শুধু ১৫ নম্বর পরিবহনই নয়, যাত্রাবাড়ী থেকে থেকে শিকড়, কোমল, শ্রাবণ, লাব্বাইকসহ প্রতিটি পরিবহনে বাদুরের মতো ঝুলিয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। অথচ মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভাড়া বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল লোকাল বাসে ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হলেই চলাচল করবে।

সরকারের এ শর্তকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে রাজধানীতে চলাচল করছে প্রতিটি পরিবহন। সেই সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি।

Advertisement

সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আর বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। চালকসহ যে বাসের সর্বোচ্চ ৩১টি সিট থাকবে তা মিনিবাস হিসেবে গণ্য হবে। আর ৩১টির বেশি সিট থাকলে তা বাস হিসেবে বিবেচিত হবে। সর্বনিম্ন ভাড়ার পাশাপাশি সরকার প্রতি কিলোমিটারের ভাড়াও এক টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

সে হিসেবে যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল ও গুলিস্তানের ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ টাকা। কারণ যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল ও গুলিস্তানের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের মতো। কিন্তু গুলিস্তান ও মতিঝিল রুটে চলাচল করা পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ আদায় করছে ১০ টাকা। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম গাবতলী রুটে চলাচল করা ৮ নম্বর। এ পরিবহনটি আগের মতোই মতিঝিল পর্যন্ত ৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

বাড়তি ভাড়া ও বাদুরঝোলা করে যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে ১৫ নম্বর পরিবহনের ওই শ্রমিকের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন সিটিং বন্ধ। লোকাল চালাইতে বলছে। তাই আমরা লোকাল চালাচ্ছি। আর লোকাল পরিবহন এভাবেই চলাচল করে। প্রতিটি স্টপেজে ৫-৭ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবে। যার ভালো লাগে সে যাবে। যার ভালো লাগবে না সে যাবে না। লোকাল পরিবহনে ওঠার শখ হয়েছে, এখন দেখুক লোকাল পরিবহনে কত মজা।’

শ্রাবণ পরিবহনের শ্রমিক মো. আসাদুল বলেন, আমরা লোকাল ভাড়াই নিচ্ছি। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১০ টাকা। আজ যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকায় ভাড়া নেয়া হচ্ছে। শুধু আমরা না সবাই গুলিস্তান পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

গেটে যাত্রী ঝুলিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো কাউকে জোর করে তুলছি না। যাত্রীরা ইচ্ছা করেই উঠছে। যাত্রীরা এভাবে ঝুলে গেলে আমাদের কী করার আছে।

এমএএস/বিএ/এমএস