জাতীয়

সিটিংয়ের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচলরত গণপরিবহন বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হয়নি। ১৫ এপ্রিল শনিবার থেকে এ সার্ভিস বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও অনেকটা কৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

Advertisement

মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে লোকাল করার কথা থাকলেও তা আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হবে।

তবে এরই মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ সিটিং সার্ভিস কার্যত লোকাল হিসেবে চলতে শুরু করেছে। তবে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে সিটিংয়ের দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন চালক-হেলপাররা। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি দেখা গেছে।

সকালে মেরাদিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ এলাকা থেকে পাঁচ-সাতটি পরিবহন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রতিটি পরিবহনেই সিটিং সার্ভিস হিসেবে ভাড়া আদায় করা হয়। তবে যাত্রী তোলা হয় লোকাল বাসের মতো।

Advertisement

রফিক নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস লোকাল করা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। এতোদিন সিটিং সার্ভিসে যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তিতে যাতায়াত করলেও এখন লোকাল করে সেই আগের ভাড়াই দিতে হচ্ছে। গাড়িতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।’

রাজধানী ঘুরে দেখা গেজে, শনিবার সকাল থেকে প্রায় সব রুটেই সিটিং সার্ভিসগুলো লোকাল করে ফেলা হয়েছে। নির্ধারিত আসনের বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। কিন্তু ভাড়া আদায় চলছে আগের মতোই। এনিয়ে প্রতিটি বাসেই যাত্রীদের সাথে চালক ও হেলপারের হট্টগোল লক্ষ্য করা গেছে। হেলপারদের দাবি, লোকাল সার্ভিস চালু হবে রোববার থেকে। এতে চরম ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা ফরহাদ উদ্দিন। শনিবার আলিফ পরিবহনে যাচ্ছিলেন গন্তব্যে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘দেখেন, এটা নাকি সিটিং সার্ভিস। সিটিং হিসেবে ভাড়া নিচ্ছে তিনগুণ। কিন্তু যাত্রী নিচ্ছে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে। বাসের মধ্যে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। তাহলে ভাড়া বেশি দেব কেন?’

যাত্রী দাঁড় করিয়ে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই বাসের হেলপার রাসেদ উদ্দিন বলেন, “কাল (রোববার) থেকে তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় প্রতিদিন সাড়ে ৯০০ টাকা ‘চান্দা’ দিতে হয়। এ টাকা কোথায় পাই? মন্ত্রীকে তো কেউ কিছুই বলেন না? তারা সবই জানেন। আমরা কি করব?”

Advertisement

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিক তাদের কিছুই জানায়নি। এখন যাত্রী বেশি হলেও মাঝে মধ্যে তো খালি থাকে।’

প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল সরকার ও মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস, গেটলক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামের সার্ভিসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে এ নিয়ে বাসের চালক ও হেলপাররা কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আলিফ পরিবহনের চালক মো. ইসমাইল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুনেছি আজ (শনিবার) থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবে। কিন্তু মালিক আমাদের কিছুই বলেনি। আমরা কি করব? আমরা তো তাদের কর্মচারী। তাই এখনও আগের মতো চালাচ্ছি। মালিক যদি বলে তাহলে লোকাল করে ফেলব।’

সিটিং সার্ভিস হিসেবে ভাড়া নেয়া হলেও অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে কেন- এর জবাবে ওই চালক বলেন, ‘রাস্তায় মানুষের যে ভিড় সে অনুযায়ী গাড়ি নেই। তারা গাড়িতে উঠার জন্য জোরাজুরি করেন। তাই আমরা তাদের তুলি। যাত্রীরা সুবিধা পান তাই ভাড়া দেন।’

তবে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার থেকে নয় রোববার থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ রাজধানীর বেশকিছু গণপরিবহন সিটিং সার্ভিস নামে বিশেষ সার্ভিস চালু করে। শুরুতে সেবার কারণে এসব গাড়ি যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু একটা সময় এসে ভাড়া বেশি নেয়া হলেও বাসগুলো যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো এবং অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে শুরু করে। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী ও হেলপারের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা দেখা দেয়।

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলা সিটিং সার্ভিস নামধারী পরিবহনগুলো হলো- রাজাসিটি, মৈত্রী, ফতেহ, ট্রান্সসিলভা, হিমাচল, শিখর, সুপ্রভাত স্পেশাল, বিহঙ্গ, হাজী, নিউভিশন, মধুমতি, প্রজাপতি, আলিফ, মোহনা, জাবালে-নূর, নূর-এ মক্কা, আকিক, অছিম, শ্রাবন্তী, তরঙ্গ, ঢাকেশ্বরী, রাজধানী, ঠিকানা, দিশারী, গ্রামীণ প্রভৃতি।

এমএসএস/এসআর/এমএআর/জেআইএম