ফিচার

সমাজসেবা : খলিল কাজী ওবিই

সমাজসেবা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ খলিল কাজী ওবিইকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-

Advertisement

খলিল কাজী ১৯৪২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মানিকগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং দেবেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের কার্ডিফের ইউনিভার্সিটি কলেজ ও লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

খলিল কাজী বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ওই বয়সেই তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষকালে গ্রেফতার হন। কিন্তু অল্প বয়সের কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতা করেন এবং পরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে সেক্টর ২ ও পরে সেক্টর ৩- এর অধীনে গ্রুপ লিডার হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

Advertisement

খলিল কাজী ১৯৭৪ সালে উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাজ্যে গমন করেন। প্রবাসে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সমাজকল্যাণমূলক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৫ সালে লণ্ডনে ঢাকা অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা থিয়েটার্স নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ পঁচিশ বছর সভাপতির দায়িত্বে থেকে প্রবাসীদের সেবা করেছেন।

খলিল কাজী ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লন্ডনের বাংলাদেশ সেন্টারে কাঠের শহিদ মিনার নির্মাণ করেন, যা দেশের বাইরে কাষ্ঠনির্মিত প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৫ সালে লন্ডনে বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। একই বছরে তিনি ক্যাম্পেইন ফর ইনক্লুশন অব বাংলা ইন মেইনস্ট্রিম এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন্স নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে কমিউনিটি-ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে এ সংগঠন প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখে।

খলিল কাজী ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মাইগ্র্যান্টস ফোরামের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় ১৫ মিলিয়ন অভিবাসী কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করে তাঁদের নাগরিকত্ব, সামজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ইন্টারফেইথ পিস ফোরামের সভাপতি। এ সংগঠনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সকল ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করে। দীর্ঘ এক যুগ তিনি লন্ডন বারা অব নিউহ্যামের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন।

প্রবাসে থেকেও খলিল কাজী বাংলাদেশের সব প্রাকৃতিক দুযোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮৫, ১৯৮৭ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় দুস্থ মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহে তিনি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ পরবর্তী পুনর্বাসন কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।

Advertisement

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমিউনিটির উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ব্রিটেনের রানি ২০০০ সালে খলিল কাজীকে ‘অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই)’ পদকে ভূষিত করেন। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে বহুজাতিক শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ২০০২ সালে তিনি রয়াল সোসাইটি অব আর্টস-এর ফেলোশিপ লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করে বিশ্ব শান্তিতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ তাঁকে অতীশ দীপঙ্কর শান্তি স্বর্ণপদক প্রদান করে।

এসইউ/এমএস