‘আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও...’ গান দিয়ে শুরু নতুন বছরের প্রথম প্রহর। রমনার বটমূলে বছরের নতুন সূর্যকে গানে গানে স্বাগত জানিয়েছে ছায়ানটের শিল্পীরা। রবীন্দ্র সঙ্গীতে শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীদের কণ্ঠে ভর করে লোকগানও।
Advertisement
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের অর্ধশতক পূর্তি উপলক্ষে এবারে ছিল পালা গানের অনুষ্ঠান ‘দিওয়ানা মদিনা’। প্রভাতের সেই গানের তালেই চলছে রাজধানীতে বর্ষবরণ উৎসব। সার্বজনীন এ উৎসবে উচ্ছ্বাসিত গোটা দেশ। বৈশাখ বরণে সবাই যেন ঘর ছাড়া। যারা ঘরে আছেন, তারাও বাঙালিয়ানার মধ্য দিয়েই দিনটি পার করছেন।
শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের ঢল নামতে থাকে শাহবাগ-রমনা এলাকায়। এছাড়া রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করা জনস্রোতে যেন তিল ধরার ঠাঁই নেই শাহবাগ, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়, রমনা, হাতিরঝিল এলাকায়। অপশক্তির ভয়কে জয় করে প্রাণের উচ্ছ্বাসে প্রাণ মিলিয়ে বৈশাখ বন্ধনায় মশগুল বাঙালি। বৈশাখের বার্তাবরণে নিজেকে তুলে ধরছেন স্ব-মহিমায়। সাদাকালো, লাল সাদায় মিলিয়ে বৈশাখী সাজে সেজেছেন তরুণ-তরুণীরা। মাথায় লাল গামছায় তরুণরা গ্রাম বাংলার কৃষকের বেশ ধরেছে। অন্যদিকে সাদা আর লাল শাড়িতে তরণীরা গ্রাম্য বধূর রূপ নিয়েছে। খোপায় গোলাপ, গাঁদা, বেলি আর শেফালি ফুল গেঁথে বৈশাখকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তরুণীরা।
সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শেষ হয় বেলা ১১টায়। চারুকলার আয়োজন থাকলেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশ্ব বিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সকলেই শোভা যাত্রায় অংশ নিয়ে প্রাণ খোলা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। শোভাযাত্রাটি শহরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের চারুকলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
Advertisement
এদিকে নিরাপত্তার জন্য শাহবাগ-রমনা এলাকায় যান চলাচলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারওয়াবাজার, দোয়েল চত্বর, পলাশী মোড়, মৎস ভবন, নীলক্ষেত, হাতিরঝিল এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ ব্যারিকেড। বৈশাখের সংবাদ সংগ্রহে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকায় ব্যস্ত রয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরাও।
রাজধানীর মতো গোটা দেশেই বৈশাখ আনন্দের হওয়া বইছে। দেশের বাইরেও বাঙালিরা বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছেন। হাজার বছরের ইতিহাসে বর্ষবরণের আবেগ আর উচ্ছ্বাসের কথা গেঁথে আছে মর্মে মর্মে। একেবারেই বাঙালির উৎসব বলে পরিচিত বর্ষবরণে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির খাঁটি রূপ রূপায়িত হয় এতে।
এ দিনটিকে ধরেই গ্রাম-বাংলার মানুষ এখনও জীবন পুঞ্জিকা সাজায়। এ দিন বাঙালি হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে স্বজনের বন্ধনে মিলে যায়। নানা স্বাদের পিঠা-পায়েষে আপ্যায়ন চলে দিনভর। চলে পান্তা উৎসবের মহাযজ্ঞ। সাম্প্রতিক বছরগুলোত বৈশাখ উৎসবে যোগ হয় জাতীয় মাছ ইলিশও।
বৈশাখী উৎসবের দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে বৈশাখী মেলা। মেলাতে থাকছে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, নানা রকম পিঠা-পুলির আয়োজন। পুরনো সংস্কৃতির খেলাধুলারও আয়োজন করা হয় গ্রামেগঞ্জে। অনেক জায়গায় আবার যাত্রাপালা, বাউল গান, কবি গানেরও আয়োজন করা হয়েছে। গানের চলবে রাতেও। এছাড়া গ্রামেগঞ্জের ব্যবসায়ীরা অনেকেই আজ আয়োজন করেছেন হালখাতার।
Advertisement
বৈশাখ উৎসবের মধ্য দিয়ে নব উদ্যমে চলার শক্তি সঞ্চয় করে বাঙালি। এবারও তাই ঘটেছে। পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে, নতুন বছরের পথ চলা শানিত করতে বৈশাখ উৎসবে মজেছে জাতি।
এএসএস/আরএস/পিআর