বিশেষ প্রতিবেদন

এখনও ‘উধাও’ চিহ্নিত ৭ লাঞ্ছনাকারী

বর্ষবরণের উৎসবে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষক (টিএসসি) এলাকায় ‘বখাটেদের’হাতে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনার দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্তের কথা বলা হলেও এখনও ‘উধাও’ তাদের সাতজন।

Advertisement

তবে অপর লাঞ্ছনাকারীর বিরুদ্ধে চার মাস আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার্জশিট দিলেও এখনও শুরু হয়নি মামলার বিচার কার্যক্রম।

বর্ষবরণের উৎসবে ঢাবিতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় আলোচিত ওই মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৩নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ঢাবির টিএসসি এলাকায় নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় চিহ্নিত আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে কামালকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে চার মাস আগে আদালতে চার্জশিট দিয়েছি। অন্য সাতজনকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে।

Advertisement

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদা আক্তার বলেন, রাজধানীর টিএসসি এলাকায় নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একমাত্র কামালকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। মামলাটির চার্জশিট গ্রহণের জন্য আগামী ২ মে দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন চার্জশিট গ্রহণ হলে মামলার বিচার কার্যক্রমের প্রথম ধাপ শুরু হবে।

‘মামলাটির বিচারকাজ শুরু হলে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারব’- বলেন তিনি।

২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাবি এলাকায় নারীদের লাঞ্ছনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ।

ওই সময় তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। পরে ওই ঘটনায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

Advertisement

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস। ওই প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বর্ষবরণে যৌন হয়রানির ঘটনা গোপন ও প্রকাশ্য তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চিহ্নিত আটজনকে গ্রেফতার করা যায়নি।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ৮-১০ দুষ্কৃতকারী কতিপয় নারীর শাড়ি ধরে টান দেয়। তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মামলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক শুধু কামালকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে এক আসামিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় ৩৪ জনকে।

মামলার একমাত্র আসামি কামালকে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের খাজি দেওয়ান রোডের প্রথম লেনের ৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। একই বছরের ১৮ জুলাই কামালকে জামিন দেন হাইকোর্ট।

জেএ/এআর/এসআর/এমএআর/এমএস