জাতীয়

‘রোজ পান্তা খাইয়াই তো কাজে আহি’

পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহর। নয়া বছরের প্রথম সূর্য সবে লাল খোলস বদলাচ্ছে। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে হালকা বাতাসও বইছে। দু’একটি গণপরিবহন তখন স্লথ গতিতে রাস্তায় এসে যাত্রী তুলছে।

Advertisement

রাজধানীর কাজীপাড়ায় জাম তলা থেকে যারা বাস বা অটোরিকশায় উঠছেন, তাদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য শাহবাগ এলাকায় বর্ষবরণ আয়োজনে। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বর্ষবরণেও যোগ দেবেন।বৈশাখের অঙ্গ সাজ একে অপরের দৃষ্টি কাড়ছে।

তবে এর মধ্যেই ব্যতিক্রমী চিত্র রয়েছে। কোদালে কেটে পাথর টুকরিতে ভরে দিচ্ছেন দেলোয়ার আর তা নিয়ে ঢালাইয়ের স্থলে ফেলছেন আবুল হাসেম। সকাল ৮টার মধ্যেই মূল রাস্তা থেকে সরাতে হবে সমস্ত পাথর।

দেলোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পান্তার আবার দিন ভেদে আলাদা স্বাদ আছে না কি? পান্তা তো পান্তাই। রোজ রোজ পান্তা খেয়েই তো কাজে আহি। এত সকালে গরম ভাত পামু কই। গরমে পান্তা না খাইয়া কাজে এলে দিন ভালো যায় না।

Advertisement

জীবিকা অর্জনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা এই শ্রমিকের কাছে নতুন বছরের আলাদা কোনো মাত্রা নেই, যে কারণে নেই কথা বলার সময়ও।

দেলোয়ার এবং আবুল হাসেমের বাড়ি বরিশাল। থাকেন মিরপুরে বস্তিসম এক মহল্লায়।

বৈশাখ আনন্দ জানেন কি না, তা জানতে চাওয়া হলে শ্রমিক দেলোয়ার বলেন, ‘দিন আনি দিন খাই। আনন্দ করার সময় কই। প্রায় ১৩ বছর হলো ঢাকায় এলাম, আনন্দের দেখা পেলাম না। চোখের সামনে অনেক কিছুই তো দেখলাম। নিজেদেরও আনন্দ করতে মন চায়। কিন্তু কাজ বাদ দিয়ে ওসব করলে তো পেটে ভাত যাবে না।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আবুল হাসেম বলেন, ‘ওসব আমাদের কপালের না। উৎসব তো সব উপর তলার মানুষদের জন্য। আমাদের কাছে প্রতি দিনই সমান। কাজের বেলাতেও কোনো তফাৎ নেই, খাবার বেলাতেও কোনো তফাৎ নেই।’

Advertisement

এএসএস/এনএফ/এমএস